কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আশপাশে বেড়ে গেছে ছিনতাই। ছিনতাইকারীদের একমাত্র টার্গেট হচ্ছে পর্যটক। হোটেল থেকে বের হয়ে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরতে বের হলেই ছিনতাইকারীরা ঘিরে ধরছে তাদের। মুহূর্তে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দিচ্ছে।
জানা যায়, পর্যটকরা প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। ইতোপূর্বে পর্যটকদের জন্য একমাত্র নিরাপদ স্থান ছিল সৈকত শহর কক্সবাজার। আর এখন রাত নামতেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। পর পর দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয় এলাকার লাবণী বিচ পয়েন্টে। এতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শুক্রবার ছুটির দিনে কক্সবাজারের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্ট ছিল পর্যটকে ভরপুর। তবে রাত নামতেই লাবণী বিচে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন মোহাম্মদ হৃদয় নামে এক পর্যটক। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে লাবণী পয়েন্টে মানিকগঞ্জ থেকে আসা আরেক পর্যটকের মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। তিনি জানান, প্রায়ই কক্সবাজার ভ্রমণে এসে ভালো কিছু উপভোগ করলেও এবার ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার মন খারাপ হয়ে গেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে উঠে আসার সময় ঝাউবনে মো. হৃদয় নামে এক পর্যটককে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী চক্র। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাবণী ও শৈবাল পয়েন্টের মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
হৃদয়ের সঙ্গে থাকা পর্যটকরা জানান, তারা কয়েকজন হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় পৌঁছে যায়। হৃদয় এবং আরেকজন পেছনে পড়ে গেলে তাদের ধাওয়া দেয় ছিনতাইকারীরা। একজন দৌড়ে রেহাই পেলেও হৃদয়কে ধরে ফেলে চক্রটি। মুহূর্তেই ছিনতাইকারীরা তার পায়ের রানে এবং পিঠে কয়েকটি ছুরিকাঘাত করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। পরে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। আহত হৃদয় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি ৪৫ জনের একটি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছিলেন।
এদিকে, লাবণী বিচে ছিনতাইয়ের শিকার আরও এক পর্যটক অভিযোগ করেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। স্থানীয় পরিবেশবাদী নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, কথা হচ্ছে, লাবণী শৈবাল পয়েন্ট থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয় কতদূর? পর্যটক এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ কি? নাকি জেলা পুলিশের ফাঁড়ি একটা সমুদ্র সৈকত এলাকায় করতে দাবি তুলতে হবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন বলেন, ছিনতাই এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কোনো চেকপোস্ট বসাচ্ছেন কি না সেটি জানা নাই। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১০টি নতুন লাইট আনা হয়েছে। সেসব সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, সৈকতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর আগেও শৈবাল পয়েন্টে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।