দখল-দূষণে মৃতপ্রায় কলাপাড়া পৌরশহরের মাঝখানের খালটি অস্তিত্ব সংকটে
দখল-দূষণে মৃতপ্রায় কলাপাড়া পৌরশহরের মাঝখানের খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। সকল ধরনের বর্জ্য এই খালটিতে ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এখন আর পানির প্রবাহ নেই। ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পানির চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালপাড়ের বাসিন্দারা দুর্গন্ধে থাকতে পারছেন না। পৌরবাসীর প্রাণখ্যাত তিন দিকে বহমান খালটি রক্ষায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বহুবার মানববন্ধনসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পালন করে আসছে। পরিবেশ আইনবিদ সংগঠন বেলার উদ্যোগে খালটির চিঙ্গরিয়া অংশের প্রায় এক কিলোমিটার অংশের বাঁধ অপসারণ করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ওই অংশের বাকিটুকু আর উদ্ধার হয়নি। এ ছাড়া স্লুইসগেট থেকে রহমতপুর পর্যন্ত মূল অংশ এখন অস্তিত্ত্ব সংকটে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, খালটির দুই পাড় দখলে আগেই সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এরই মধ্যে যতটুকু রয়েছে তাতে পারিবারিক বর্জ্য থেকে শুরু করে ব্যবহারের অপ্রয়োজনীয় খাতা-বালিশ পর্যন্ত খালটিতে ফেলা হয়েছে। পলিথিন আর প্লাস্টিক তো আছেই। দুই পাড়ের বাসিন্দারা খালটিতে শত শত টয়লেট স্থাপন করেছে। আবার অধিকাংশরা বাসার টয়লেটের আউটলাইন খালে দিয়ে রেখেছে। বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আনুমানিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ খালটির এতিমখানার দ্বিতীয় পোলের পরে এখন আর জোয়ারের পানি প্রবহমান থাকে না। ফলে পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় রহমতপুর পর্যন্ত অংশের সকল বর্জ্য ময়লা আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
শহরের বাসিন্দা স্থপতি ইয়াকুব খান বলেন, ‘খালটিকে সবাই দেখেশুনে উদার ও নগ্ন চিত্তে ব্যবহার করছে।’ আতিফ ইসলাম আরিফ বলেন, ‘ এই খালটাই আমাদের শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছে, বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থা। মশা চাষের উপযোগী। কিছুদিন এভাবে থাকলে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।’ শাহজালাল মৃধা বলেন, খালটি খনন করা দরকার। রুবেল হাওলাদার বলেন, দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির কারখানা এই খাল, দুর্ভাগ্য আমাদের দেখার কেউ নেই।’ দ্রুত খালটি খনন করে শরহরবাসীকে স্বস্তি দেওয়ার দাবি সচেতন মহলের। ইতোপূর্বে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয়রা এবং পরিবেশ কর্মীরা খালটি দখল-দূষণ বন্ধে এবং ময়লা-আবর্জনা অপসারণের দাবি করে আসছে। কিছু তারা কর্ণপাত করেননি। কলাপাড়া পৌরসভার অর্ধ লাখ মানুষের আকুতি খালটি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। পরিবেশ কর্মী নজরুল ইসলাম জানান, সীমানা চিহ্নিত করে খালটি রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
কলাপাড়া পৌরসভার বর্তমান প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, খালটির দখল-দূষণ বন্ধে এবং বর্জ্য অপসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খালটি সীমানা চিহ্নিতের কাজ শুরু হয়েছে। খনন শেষে খালের দুই পাড় বাধাই করে স্লোপে ব্লক স্থাপন করে ওয়াকিং জোন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো প্রকল্পের’ আওতায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় নয় কোটি টাকা।