ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২৩ ফাল্গুন ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ॥ ১৪ বছর পর হত্যা মামলা

হাজিরা দিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার আসামিরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২০:২০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

হাজিরা দিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার আসামিরা

মো. জিয়াউর রহমান (৩৪)। মৃত্যু সনদ অনুযায়ী তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২০১৫ সালে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সেই জিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার ভাই মো. তাইফুর রহমান (৩৫)। ওই দিনই কলাপাড়া থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করেন। এ মামলায় খুনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে ২০১০ সালে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪১ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে। আসামিরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। অভিযুক্তরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পটুয়াখালী আদালতে হাজিরা দিতে এলে কোর্ট প্রাঙ্গণে আসামি সোহাগ মিয়াকে ইট ও হাতুড়ি দিয়ে দুই পা থেতলে দিয়েছে পটুয়াখালী বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সোহাগ মিয়াকে সংকটাপন্ন অবস্থায় বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাটি কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের। মো. জিয়াউর রহমান ওই ইউনিয়নের মস্তফাপুর এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।
কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের জারিকৃত মৃত্যু সনদ সূত্রে জানা যায়, জিয়াউর রহমান জিয়া (৩৪) ২০১৫ সালের ২৫ মে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তার বাবার নাম মৃত্যু হাবিবুর রহমান। জিয়ার মৃত্যুর স্থান দেখানো হয়েছে গ্রাম মস্তফাপুর, ডাকঘর পাখিমারা, ওয়ার্ড নং-৯, ইউনিয়ন নীলগঞ্জ, উপজেলা-কলাপাড়া ও জেলা-পটুয়াখালী। নীলগঞ্জ ইউপির মৃত নিবন্ধন বই নং-০২/২০০৯, নিবন্ধন তারিখ : ২৫-৫-২০১৫। নিবন্ধন সনদ ইস্যুর তারিখ ৩০-১০-২৪, নিবন্ধন নং-৭৪২, পৃষ্ঠা নং-৫১। অথচ কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নিহত জিয়ার ভাইয়ের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানাযায়, গত ২০১০ সালের ২৪  অক্টোবর সকাল দশটার দিকে আসামিরা তার ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ফলে ও তাদের হুমকিতে তড়িঘড়ি করে লাশ নিজ বাড়িতে দাপন করা হয় কোনো প্রকার ময়নাতদন্ত ছাড়া। জিআর মামলা নম্বর-১৬৭/২০২৪। এই তারিখে মামলাটি দায়ের এক মাস পরে ৮ অক্টোবর মামলায় উল্লিখিত তারিখটি ভুল হয়েছে বলে ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর হবে বলে সংশোধনীর আবেদন দেন আদলতে। যা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। এদিকে আদালতে দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হলেও কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেকর্ডে দেখা যায় ২০১৫ সালের ২৫ মে জিয়াউল হক জিয়া গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হন। সময় উল্লেখ করা হয় দুপুর ১২টা। সিরিয়াল নাম্বার ৪৩৮৫/১২।
এ ছাড়াও নিহত জিয়ার সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করে এমডি মাহাবুব খান নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ২০১৫ সালের ২৬ মে তার ফেসবুক ভেরিফাই অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন নীলগঞ্জ ইউনিয়ন নিবাসী কলাপাড়া থানার বিএনপি নেতা পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ২৫-৫-১৫ তারিখ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। আমি এই ছাত্রনেতার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।  
২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তিন তারিখে কলাপাঙা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে  ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর ঘটনা উল্লেখ করে ১৪ বছর পরে একটি হত্যা মামলা দায়ের করায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। এ মামলায় উচ্চ আদালতে থেকে জামিন নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া আদালতে হাজিরা দিতে আসলে কয়েকজনকে নির্যাতন করা হয়।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির প্রধান গেটের সামনে গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বেশ কয়েক আসামিকে মারধর করে গুরুত্বর জখম করা হয়। হামলায় অংশ নেয়া সকলেই পটুয়াখালী বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এ ছাড়া হামলায় সরাসরি দুই জন আইনজীবী অংশ নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে হামলার সময় উপস্থিত স্থানীয়রা ছবি এবং ভিডিও ধারণ করলেও হামলাকারীরা হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক হামলার ছবি এবং ভিডিও ডিলেট করতে বাধ্য করেন। হামলায় অপর আহতরা হচ্ছেন- মো. সোহাগ, সোহাগ মিয়া এবং মো. জামাল। এদের মধ্যে সোহাগ মিয়াকে কোমরের নিচে ইট এবং হাতুড়ি দিয়ে থেতলে দেওয়া হয়েছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহত সোহাগ কলাপাড়া নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়ার ছোট ভাই।
নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আসার পরও আজ আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাদের ১০ থেকে ১২ জনকে মারধর করে আহত করা হয়েছে। আহত করার পর তাদের কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে বসাকবাজার এলাকায় ছেড়ে দেয় হয়। তারা তাদের চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেয়নি। আদালতের মতো জায়গায় আজ মানুষের নিরাপত্তা নেই।’ এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ জুয়েল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

×