ছবিঃ সংগৃহীত।
চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, রয়েছে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি। আশপাশে নেই কোনো যাতায়াতের রাস্তা, রয়েছে কৃষকের চরম কষ্ট ও ভোগান্তি । চাষাবাদে কৃষক যেন নিজেই হয়ে উঠেছেন যান্ত্রিক বাহনের বিকল্প মাধ্যম। আবাদি জমির মধ্য দিয়ে গরুর গাড়ি, পাওয়ার টিলার ও ভ্যান সহ কোনো যানবাহনের যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় হাজার হাজার কৃষক চৈত্রের খরা রোদে নিজের ঘাড়ে করে ফসল বহন করেন। বর্ষাকালে সাঁতার কেটে ফসল মাথায় তুলে গন্তব্যে পৌঁছান, এই নিদারুণ কষ্টের দৃশ্য দেখার যেন কেউ নেই।
কৃষি কাজের এই সম্ভাবনাময় আবাদস্থল হচ্ছে রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের জওগাঁও লোলতই ব্রীজ থেকে গাজিরহাট ভন্ডগ্রাম ব্রীজ পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ ৫ কিলোমিটার একটি বিল। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় লোলতোই খাল খনন করেন। এতে করে বিলের পানি খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কৃষকরা বছরে আমন, বোরো ধান ও সরিষা সহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতে পারছেন। কিন্তু খালের উপরে অব্যবহৃত রাস্তা পাকা না হওয়ায় মাটি পুনরায় খালে পড়ে যাওয়ায় খালটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং পুনরায় জলবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষক আলমগীর হোসেন, আব্দুর রহমান ও মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী বলেন এখন জমিতে ফসলের অনেক ভালো ফলন হচ্ছে। আগে জলাবদ্ধতার কারণে একটি ফসলের বেশি করা যেতো না। এখন ওইসব জমিতে তিনটি ফসল হচ্ছে। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার সময় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় আমাদের। অনেক দুর থেকে ফসল মাথায় করে বয়ে আনতে হয়। অনেক সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। সময় মতো ফসল কাটতে না পাড়লে ফসল ঝড়ে যায়। সরকারের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ খালটি পুনরায় খনন ও খালের অব্যবহৃত রাস্তাটি জন্য দ্রুত পাকা করে দেওয়া হয়।
লোলতই বিলে খননকৃত খালের অব্যবহৃত রাস্তা পাকাকরণের দাবিতে গঠিত কমিটির আইন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান শুভ বলেন, হাজার হাজার কৃষকের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রাথমিক ভাবে কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সাথে খালের অব্যবহৃত রাস্তা পাঁকাকরণের জন্য মিটিং করেছি এবং মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট ১২ টি দপ্তরে রিপ্রেজেন্টেশন আকারের ফাইল প্রেরণের কার্যক্রম ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। আমরা চাই সরকার যেনো দ্রুত ওই বিলে রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ভন্ডগ্রাম থেকে জওগাঁও বিলে আগে হাঁটু সমান পানি জমে থাকার কারণে বছরে একবার ফসল ফলানো সম্ভব হতো। বিএডিসি কর্তৃক খাল খননের ফলে ঐ বিলের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ টি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বিস্তীর্ণ এই ফসলের মাঠের আশেপাশে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষকদের। আমি উপজেলা কর্মকর্তা হিসেবে চাই আমার অঞ্চলের কৃষকদের চাষাবাদের সুবিধার্থে খালের পাড়ের ৫ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করা হোক।
Faruk