ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

ময়মনসিংহ নগরী

শত কোটি টাকার জমি উদ্ধারে গড়িমসি

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ২১:২৪, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

শত কোটি টাকার জমি উদ্ধারে গড়িমসি

জমি উদ্ধারে গড়িমসি

ময়মনসিংহ নগরীতে জালিয়াতির মাধ্যমে বেহাত হওয়া শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারি প্রায় ছয় একর জমি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের গড়িমসি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া এই সরকারি জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর এ জমি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গুঞ্জন রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জালিয়াতিকারী ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জবরদখলকারীদের আঁতাতের কারণেই নগরীর পাটগুদাম এলাকার খাস খতিয়ানের এই জমি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরীর কৃষ্ণপুর মৌজার পাটগুদাম এলাকার হাজী কাশেম আলী কলেজ সংলগ্ন এসএ ৪৮ ও ৪৯ নম্বর দাগে ৫ একর ৯৮ শতাংশ জমি খাস খতিয়ানভুক্ত। রেকর্ড মতে এই জমির মালিক ময়মনসিংহ কালেক্টরেট। ময়মনসিংহ পৌর ভূমি অফিসের দুর্নীতিপরায়ণ কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে নগরীর কেওয়াটখালি এলাকার হাফিজ উদ্দিনের পুত্র মোসলেম উদ্দিন এই জমির মালিকানা দাবি করে ময়মনসিংহের প্রথম সাবজজ আদালতে মামলা করেন। এ মামলায় ১৯৮১ সালে মোসলেম উদ্দিন ডিক্রি পান। সরকার এই ডিক্রির বিরুদ্ধে গত ১৯৮২ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন। আপিলে নিম্ন আদালতের রায় ও ডিক্রি দুই তরফা সূত্রে খরচাসহ বাতিল করে সরকার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশ গোপন করে মোসলেম উদ্দিন ওই জমির খাজনা পরিশোধে ভূমি কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৪৭৭ নম্বর হোল্ডিং খুলে নেন। বিষয়টি নজরে এলে তৎকালীন অ্যাসিল্যান্ড ১৯৮৯ সালে ৪৭৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেন। ১৯৯১ সালে তৎকালীন তহশিলদার আব্দুর রহিম এক প্রতিবেদনে সরকার পক্ষ আপিলে হেরে গেছে এবং মোসলেম উদ্দিনের পক্ষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছে উল্লেখ করলে তৎকালীন অ্যাসিল্যান্ড গিয়াস উদ্দিন মোগল ৪৭৭ নম্বর হোল্ডিং চালু করে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের আদেশ দেন। এই আদেশের আলোকে আব্দুর রহিম ৪৭৭ নম্বর হিসাবটি চালু করার পাশাপাশি এই হিসাব থেকে নিজে ১৭টি, তার শ্যালক সহকারী তহশিলদার আনিসুল হক  ১৩টি এবং তহশিলদার আব্দুল মজিদ ৫৪টি নতুন হিসাব চালু করে খাজনা আদায় করলে সরকারি খাস খতিয়ানের এই জমি ব্যক্তি মালিকনায় বেহাত হয়। পরবর্তীতে হাল জরিপে এই জমি ৮৪ জনের নামে আলাদা রেকর্ডভুক্ত হওয়ায় সরকারি জমি বেহাত চূড়ান্ত হয়। এ নিয়ে কৃষ্ণপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ও মোহাম্মদ আলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব আব্দুল মালেক, ঢাকা বিভাগের উপভূমি সংস্কার কমিশনার পতিত পবন বৈদ্য ও ময়মনসিংহ কালেক্টরটের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আতিকুর রহমান সরেজমিন তদন্তে এলে চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হয়। তদন্ত কর্মকর্তাদের সুপারিশে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ময়মনসিংহ সদর ভূমি অফিসের তৎকালীন অ্যাসিল্যান্ড গিয়াস উদ্দিন মোগল ও লুৎফর রহমান, তৎকালীন পৌর তহশিলদার আব্দুর রহিম, সহকারী তহশিলদার আব্দুল হাই ও আনিসুল হক আকন্দ, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ফাতেমা বেগম ও গোলাম মোহাম্মদ এবং পৌর ভূমি অফিসের তৎকালীন প্রধান সহকারী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা, পদাবনতি, বাধ্যতামূলক অবসরসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তাদের সুপারিশে ভূমি মন্ত্রণালয় গত ২০০৭ সালের ২৮ অক্টোবর ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। গত ২০১০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে বহাল তবিয়তে রয়েছে জবরদখলকারীরা। স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ নিয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক রিট পিটিশনের জটিলতার কথা বলা হলেও রিট নিষ্পত্তি কিংবা শুনানির ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

×