ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

থানার ওসির বিরুদ্ধে ডাকাত ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ বরিশাল। 

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

থানার ওসির বিরুদ্ধে ডাকাত ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

ছবি: ওসি শফিকুল ইসলাম

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জে ডাকাত ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে থানার ওসি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। 

৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ২ টায়  পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড আজিমপুর এলাকার সাবেক সেনা কর্মকর্তা মৃত এ কে আলম আকনের পুত্র শামীম রেজার বসত ঘরে ১১/১২ জনের ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে ঘরের সদস্যদের জিম্মি করে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। 

ডাকাত সদস্যদের বাধা দিতে গেলে শামিম রেজাকে মারধর করে এ সময় এক ডাকাতের মুখের মাস্ক খুলে গেলে তাকে চিনতে পারে। 

ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ভুক্তভোগী শামীমের বক্তব্য অনুযায়ী ডাকাত সন্দেহে সবুজ দফাদার নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে থানা পুলিশ। আটককৃত ব্যক্তি সবুজ দফাদার পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ভবানিপুর গ্রামের সুলতান দফাদারের ছেলে। 

পরবর্তীতে ডাকাত সন্দেহে সবুজকে আটকে রেখে জিজ্ঞেসাবাদ করে থানা পুলিশ। কিছুক্ষণ পরে সবুজ নামের ওই ব্যক্তিকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে থানার ওসিকে নিয়ে নানান রকম প্রশ্ন উঠেছে। 

ভুক্তভোগী শামিম আকন জানায়, বাসার সবাই রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যায়। আমি রাতে টিভিতে খেলা দেখে ২ টার সময় বিছানায় শুয়ে পড়ি কিছু সময় পরেই চোখের উপরে আলো পরতেই চোখ মেলে দেখি মুখ বাধা এক লোক আমার চোখের উপরে লাইটের আলো মেরে রেখেছে ও গলায় রামদা ঠেকিয়ে বলে কোন কথা বলবি না। এ সময় আলমারির চাবি চায় অন্য একজন আমার হাত পা বাঁধা শুরু করে। টের পেয়ে পাশে থাকা স্ত্রী সজাগ হলে অন্য একজন আমার স্ত্রীর গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে চুপ থাকতে বলে। তারও হাত বেঁধে ফেলে। এই শব্দ পেয়ে আমার চার বছরের ছেলে সজাগ হলে এমন অবস্থায় কান্না শুরু করে। তখন একজন ছেলের কাছে গিয়ে ধমক দিলে ছেলে ভয় পেয়ে থেমে যায়। এসময় আমি বলি ছেলে ভয় পাইতেছে। তখনই ওই সবুজ আমার বুকে একটা লাথি দেয়। এমন সময় তার মাস্ক খুলে যায়। তাদের লাইটের আলোতে আমি ও আমার স্ত্রী স্পষ্ট দেখতে পাই। ঘরে ১১/১২ জন লোক সবাই মুখোশ পড়া ছিলো। 

সবুজকে চিনতে পারি বলেই পুলিশের হাতে তুলে দেই। কিন্তু পুলিশ কেন বা কিজন্য তাকে ছেড়ে দেয় জানিনা। 

শামিম আরও জানায়, ঘরে থাকা স্বর্ন, নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতরা যার মূল্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। ডাকাত দল প্রায় ৪০ মিনিট ঘরে অবস্থান করে ডাকাতির কার্যক্রম চালায়। এই বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি ডাকাতি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও শামীম জানায়। 

ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সেলিম খান জানায়, গত শুক্রবার রাতে তার ঘরে কেউ না থাকায় তার ঘরেও চুরি হয়। ঘরের তালা কেটে সব মালামাল নিয়ে যায়। এর এক সপ্তাহ আগে শামিম আকনের প্রতিবেশী হযরত আলীর ঘরে চুরি হয়। 

হযরত আলী জানায়, রাত প্রায় তিনটার দিকে ডাক চিৎকার শুনে দরজা খুলে বের হইতে গেলে বাহির থেকে ছিটকানি দেওয়া থাকে। শামিমেরে স্ত্রী আমাদের ঘরের ছিটকানি খুলে দিলে বাইরে বের হই ও শামীমের ঘর ডাতাকি হয়েছে শুনি। ঘরে গিয়ে দেখি সব এলোমেলো।

অন্য এক প্রতিবেশী জানায়, এক মাসে এই এলাকায় পাঁচ ঘরে চুরি হয়েছে ও শামিমের ঘরে ডাকাতি হয়েছে। এলাকার সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

এ বিষয়ে সবুজ দফাদার জানায়, তাকে কেন আটক করে থানায় আনা হয়েছে সে নিজেও সঠিক জানেনা। তবে তাকে ডাকাত সন্দেহে কাউন্সিলর সেলিমের লোকজন মারধর করেছে। 

তিনি দাবি করেন সে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতো তাই তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। সে ডাকাতি বা চুরির সাথে জড়িত নয়। 

বাকেরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, রাতে ঘরের মধ্যে মানুষ লুকিয়ে ছিল। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তাদেরকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে মালামাল লুট করে নেয়। বাদির পক্ষ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে সবুজ নামে একজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে সবুজকে আবারও ডাকা হবে। ডাকাতি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য পেলে সবুজকে গ্রেফতার করা হবে।

শিলা ইসলাম

×