কথায় কথায় সড়ক অবরোধসহ হঠাৎ করে বিক্ষোভের নগরীতে পরিনত হয়েছে বরিশাল। গত কয়েকদিন থেকে ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা নগরী।পুলিশ খুব একটা কার্যকরী ভূমিকায় না থাকায় এরইমধ্যে একের পর এক অঘটনের খবর মিলতে শুরু করেছে। যেকারণে জনমনে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সচেতন বরিশালবাসীর মতে, বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনকে বিক্ষোভে রূপ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে তাদের অজান্তেই হিংসায় রূপ দেওয়া, পেশাজীবীদের আন্দোলনকে জনদুর্ভোগে পরিনত করে পরিস্থিতি চরম আকারে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে একটি বিশেষ মহল। এ অবস্থায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারী দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ববি প্রশাসন।
সূত্রমতে, সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য থ্রি হুইলার নীতিমালা চূড়ান্ত করে দ্রুত লাইসেন্স প্রদান ও অবৈধ টোকেন ব্যবসা বন্ধ করাসহ আটদফা দাবিতে নগরীর বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মীরা।
এর আগে, ২৯ জানুয়ারি বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ১৬ রুটের বাস ধর্মঘট বড় নজির হয়ে উঠেছে। এক শিক্ষার্থীর সাথে বাসের কর্মীদের বাগবিতন্ডাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে আসার পর একটি বিশেষ মহলের নেপথ্য উস্কানিতে প্রথমে একটি বাস ভাঙচুর করে। পরে পূর্ণরায় বিক্ষোভ করে বিনাকারনে হামলা চালিয়ে আরও দুইটি বাস ভাঙচুর করে।
এরপর উস্কানিদাতাদের মদদে শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরসহ অফিসের সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে পুরো বিষয়টির নিস্পত্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা চলে যায়।
এ অবস্থায় পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে দেখে চক্রান্তকারীরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাস মালিক-শ্রমিক গ্রুপে ঢুকে উস্কানি দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের আহবান করেন। যে কারণে প্রায় সাড়ে ১৩ ঘন্টা দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। সচেতন বরিশালবাসীর মতে, চক্রান্তকারীদের উদ্দেশ্য ছিলো জনদুর্ভোগ চরমে উঠানো এবং তারা তাতে সফল হয়েছে।
এর আগে ২৫ জানুয়ারি রহমতপুর এলাকায় এক যুবকের হত্যাকান্ড এবং নগরীর বিএম কলেজের সামনে ইজিবাইকের চাঁপায় এক শিশু নিহতের ঘটনায় নথুল্লাবাদ এলাকায় পৃথকভাবে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করা হয়।
এছাড়া বিসিসি’র পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক অন্দোলনের মধ্যে ঢুকে ষড়যন্ত্রকারীরা কর্মীদের পরিচ্ছন্নতার কাজ থেকে বিরত করে রাখে। শহর হয়ে যায় আবর্জনায় ভরপুর, সৃষ্টি হয় জনদুর্ভোগের।
গত ২৬ জানুয়ারি ষাটোর্ধ বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬০ জন শ্রমিককে চাকরিতে পুনঃবহালসহ তিন দফা দাবিতে বিসিসির প্রধান ফটকে তালা মেরে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। শ্রমিকরা করপোরেশনের মূল ফটকে তালা দিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
পাশাপাশি সড়ক অবরোধের ফলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চকবাজার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সূত্রের দাবি, প্রতিটি ঘটনাকে উস্কানি দিয়ে জনদুর্ভোগ পর্যন্ত নেওয়ার জন্য উস্কানিদাতারা তৎপর রয়েছে এবং তারা সফলও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ভূমিকায়ও দেখা দিচ্ছে সন্দেহ। যে ঘটনা ঘটার পর পরই সুরাহা হয়ে যায় তার নিস্পত্তিতে পুলিশ ও প্র্রশাসনের দীর্ঘ বিলম্ব নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করছে।
সর্বপরি বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতীয়মান হচ্ছে বরিশালকে অস্থির করার জন্য বর্তমান সরকারের বিরোধী একটি চক্র সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। নানা পেশায় কর্মরত ওই চক্রটি যে যার অবস্থান থেকে চক্রান্ত বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এর পরিনতি নিয়ে চিন্তিত বরিশালের সাধারন মানুষ যাদের কথা বলার কোন প্লাটফর্ম নেই।
এছাড়াও ২৬ জানুয়ারি সকালে নগরীর কাশিপুর ইছাকাঠী এলাকার হাতেম মীরার দিঘী ও পাশের একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কাটা হাত, পা ও শরীরের পাঁচটি অংশের টুকরো উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এরপর তিনদিনে ওই এলাকার বিভিন্ন পুকুর ও ময়লার ডাস্টবিন তল্লাশী করে পুলিশ মানুষের শরীরের সাতটি টুকরো উদ্ধার করেছে। এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় গোটা বরিশালজুড়ে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অপরদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটকের পর দরজা ভেঙ্গে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হলে ববি জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে।
এ অবস্থার মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এটিএম রফিকুল ইসলাম এক নোটিশে উল্লেখ করেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে; যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার অন্তরায়।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে
আশিক