ছবি: জনকণ্ঠ
দেশি আখের বিকল্প হিসেবে বাগেরহাটের ফকিরহাটে ফিলিপাইনের উন্নত জাতের কালো আখ (ব্ল্যাক সুগার কেইন) চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী সোমা বেগম। তাদের এই সাফল্যে আশপাশের কৃষকদের মধ্যেও এই জাতের আখ চাষের আগ্রহ বেড়েছে।
সরেজমিনে ফকিরহাট উপজেলার আট্টাকা গ্রামের বাহিরদিয়া ব্লকে দেখা যায়, কৃষক জাহাঙ্গীর আলম তার আখের খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেতের ১৪ থেকে ১৭ ফুট লম্বা আখের কান্ড হেলে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা খেত দেখতে আসছেন, এমনকি পাইকাররাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এই আখ কেনার জন্য।
পাইকার রমজান আলী শেখ জানান, এ জাতের আখ কালো, নরম, বেশি রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় সব বয়সী মানুষের কাছে চাহিদা বেশি। তাই তিনি দেশি আখের পরিবর্তে ফিলিপাইন জাতের কালো আখ কিনতে আগ্রহী।
কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি ১৫ শতক জমিতে ফিলিপাইন কালো আখ চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে এক হাজার আখের চারা (কাটিং) পেয়েছিলেন। যদিও কিছু চারা নষ্ট হয়ে গেছে, তবে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার আখ উৎপন্ন হয়েছে। প্রতিটি আখ ৫০ টাকায় বিক্রি করলে তার মোট আয় দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, একবার চারা রোপণ করলে টানা তিন বছর নতুন করে কাটিং লাগাতে হয় না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন চারা গজায়, যা পরবর্তী বছরেও ফলন দেয়। স্বল্প খরচে এমন লাভ সাধারণত অন্য ফসল থেকে পাওয়া যায় না।
কিষাণী সোমা বেগম জানান, সাধারণ আখের তুলনায় এই আখে ডগা-কান্ড চোষা মাজরা পোকা, উইপোকা বা লাল পচা রোগ কম হয়। তাছাড়া, সাধারণ আখ পরিপক্ক হতে ১২-১৫ মাস সময় লাগে, কিন্তু ফিলিপাইন কালো আখ মাত্র ৮-৯ মাসেই পরিপক্ক হয়। ফলে চাষের সময় ও খরচ দুটোই কম পড়ে। এছাড়া, আখ খেতের ফাঁকে লাল শাক, মরিচ ইত্যাদিও সমন্বিতভাবে চাষ করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেখ সাখাওয়াত হোসেন জানান, ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় ফকিরহাটে ফিলিপাইন কালো আখ চাষ করা হচ্ছে। বাজারে সাধারণ আখ তুলনামূলক শক্ত ও কম মিষ্টি হয়, কিন্তু চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো জাত হলো ফিলিপাইন কালো আখ। স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিপক্ক হওয়া, বেশি রসালো ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে এই আখ চাষের আগ্রহ বাড়ছে।
তাবিব
