ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

ইউজিসি’র বৈঠক

সাত কলেজকে নিয়ে হচ্ছে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

সাত কলেজকে নিয়ে হচ্ছে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’

রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত

রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির মধ্যে আর নেই। আবার এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও থাকছে না। কলেজগুলো নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে  বিশ^বিদ্যালয়ের নামে যেসব প্রস্তাব আসছে তাতে শিক্ষা উপদেষ্টার একটি নামই মনে ধরেছে।

আর সেটিই যদি হয় তবে পৃথক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’। জানা যায়, বৃহস্পতিবার ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজসহ এ-সংক্রান্ত কমিটির তিন সদস্য শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই এই নাম প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ জনকণ্ঠকে জানান, কয়েকটি নামের মধ্যে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি তাঁদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। শিক্ষা উপদেষ্টাও এই নামের প্রশংসা করেছেন। তবে ছাত্ররা যেটা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন নাম মাথায় এলেও আমরা এই নামটিই প্রস্তাব করেছি। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের ওপর। তাদের মত ছাড়া আমরা কোনো নাম চূড়ান্ত করতে পারি না।
এই নামের প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে নামটি জুলাই-আগস্টের স্পিরিটকে স্পর্শ করে। এবং শিক্ষার্থীদের যে অনুভূতি সেই অনুভূতিকে সম্মান জানায়। তবে আবারও বলছি নামটি নির্ভর করবে শিক্ষার্থীদের সম্মতির মধ্য দিয়েই।
সাত কলেজ নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সে সংকটে পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একাধিকবার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কলেজ অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। সেখান থেকে নানা সমস্যা ও সমাধানের মত আসছে। সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। এরপরই সিদ্ধান্ত আসবে। তিনি মনে করেন, দ্রুত সাত কলেজের সমাধান করা দরকার। আর সেটি না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে।
রাজধানীর সাত কলেজের সবগুলোতেই রয়েছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থী। কলেজগুলোর শিক্ষকদের প্রায় সবাই বিসিএস ক্যাডার। বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের মানসিকতার পার্থক্য রয়েছে। এ ছাড়াও আইনি জটিলতা স্বতন্ত্র বিশ^বিদ্যালয় গঠনে বড় সমস্যা। অবকাঠামোর প্রতিবন্ধকতা ও সমন্বয়হীনতা আছেই। সবমিলিয়ে সাত কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরে অন্তত ৫ বাধা দেখছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়াও সাত কলেজের অভিন্ন নাম না দেওয়া হলে অন্য কলেজগুলোও আপত্তি তুলবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে না থাকায় কোন পদ্ধতিতে এই কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষার ঊর্ধ্বতনরা। কারণ ঢাবি জানিয়ে দিয়েছে তাদের অধীনে চলতি শিক্ষাবর্ষে কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এসব কারণে সাত কলেজের এই স্তরের শিক্ষার কি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। 
সাত কলেজের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে মান-মর্যাদা ও পড়াশোনার ধরন তার সঙ্গে এসব কলেজের শিক্ষকদের পার্থক্য স্পষ্ট। কলেজগুলোকে বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হলে এসব শিক্ষক বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াবে, না নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে সেটিরও কোনো ব্যখ্যা নেই। শিক্ষার্থীরা জানান, সাত কলেজের সঙ্গে সর্বোচ্চ বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। একাধিক শিক্ষার্থীকে থার্ড ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাস দেওয়ায় অনেকেই ভালো চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতেও পারে না।
এ ছাড়াও প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদনে স্বতন্ত্র আইন প্রয়োজন হয়। যা সংসদে অনুমোদন হওয়া লাগে। তবে এই কলেজগুলোর বিশ^বিদ্যালয়ে পরিণতি পেতে সরকার কোন পথে এগোবে সেটিও পরিষ্কার নয়। নতুন শিক্ষাবর্ষে ঢাবির অধীনে শিক্ষার্থীরা না আসলেও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ঢাবির অধীনে থাকছে। স্বতন্ত্র একটি বিশ^বিদ্যালয় হলে তারাও ঢাবি থেকে বের হয়ে আসার আন্দোলন করতে পারে সে শঙ্কাও আছে। 
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি প্রতিনিধি হিসেবে বিশেষজ্ঞ কমিটিতে থাকা অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, অধিভুক্তি বাতিলে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। তার মধ্যেই তো এত বড় ঘটনা হয়ে গেল। এখন ঢাবি অধিভুক্তি বাতিলের বিষয়টি জানিয়েছে। উপাচার্য যেটি বলেছেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি ভর্তির বিষয়টি সুরাহা করবে। সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হয়তো একটা প্রক্রিয়া বের করা হবে।

×