ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

২৫ ফেব্রুয়ারি ফের নগর পরিবহন চালুর ঘোষণা ॥ লাইনে অন্য বাস চলবে না

রুট ফ্রাঞ্চাইজিতেই সমাধান

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২২:৫০, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

রুট ফ্রাঞ্চাইজিতেই সমাধান

ফের নগর পরিবহন চালুর ঘোষণা

২০০৪ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তৈরি করা কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি)’তে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব, যাত্রীদের যানবাহন ব্যবহারের তথ্য বিশ্লেষণ ও যানজটের কথা বিবেচনা করে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বা বিশেষ পদ্ধতিতে বাস পরিচালনার পরামর্শ দেওয়া হয়। অর্থাৎ বিক্ষিপ্তভাবে বাসের অনুমোদন না দিয়ে পরিকল্পিত ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়।

কিন্তু গত ২০ বছরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এজন্য দায়ী বাস্তবায়নকারী সংস্থায় উপযুক্ত ব্যক্তির অভাব এবং সমন্বয়হীনতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতিই ঢাকার নগর পরিবহন সংকটের একমাত্র সমাধান হতে পারে। 
আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি আবারও ঢাকা নগর পরিবহন চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে কি না নিয়ে তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। অপরদিকে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

বিশেষজ্ঞদের মতামত, ঢাকায় গুটিকয়েক কোম্পানির মাধ্যমে বাস সার্ভিস পরিচালনা করতে হবে। রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি লাইনে অন্য কোনো বাস চলতে পারবে না। সেটি করা সম্ভব হলেই ঢাকার নগর পরিবহন সংকটের সমাধান করা যাবে। ঢাকার গণপরিবহন নিয়ে পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রকাশিত হচ্ছে পঞ্চম ও শেষ পর্ব। 
জানা গেছে, ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ছয়টি কোম্পানির অধীনে ঢাকার বাস সার্ভিস পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন পরিবহন মালিক, সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের রাজি করানো হয়। তিনি ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দলকে পরিকল্পিত বাস পরিচালনার বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি করার দায়িত্ব দেন।

কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর উদ্যোগটি অনেকটাই থেমে যায়। পরবর্তীতে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কার্যক্রম সমন্বয় করতে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এটি ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’ নামেই পরিচিত।
এই কমিটির আহ্বায়ক হলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)’র মেয়র বা প্রশাসক। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ডিটিসিএ, পুলিশ, রাজউক, বিআরটিএ, বিআরটিসি, সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞরা এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। গত ছয় বছরে এই কমিটি ২৯টি সভা করেছে।

গত বছর ১১ নভেম্বর ডিএসসিসির নগর ভবনে কমিটির সর্বশেষ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এর পর আর কোন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়নি। এই কমিটির কার্যক্রম ও রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এখানেই উপযুক্ত ব্যক্তির অভাব ও সমন্বয়হীনতার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, ডিটিসিএর সমন্বয়হীনতার কারনেই বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে না। কারন তারা যেভাবে ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিস চালু করছে এটা আমাদের পরিকল্পনা নেই। ডিটিসিএর পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকের সংকট রয়েছে। এখানে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিকল্পনাই বুঝে না এমন লোক দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর আগে সবুজ ক্লাস্টারে পরীক্ষামূলক ঢাকা নগর পরিবহন বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছিলো এটা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।

এখনো আবারো একই রুটে ঢাকা নগর পরিবহন চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। কারণ রুট ফ্র্যাঞ্চাইজে অন্য কোনো বাস চলতে পারবে না। এক রুটে এক রঙের এক কোম্পানির সকল বাস চলাচল করবে। এই বাস সার্ভিস চালুর আগে কাউন্টারগুলো ঠিক করা ও বাস ডিপো তৈরি করাসহ প্রাথমিক কিছু কাজ করতে হবে। এই কাজগুলো এখনো শেষ হয়নি। এ ছাড়া এ সকল রুটের পুরোনো বাসগুলো কি করা হবে তা স্পষ্ট নীতিমালাই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ বাস সার্ভিস চালু হলে তা তেমন কার্যক্রম হবে না বলে জানান তিনি।  
বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি কিভাবে কার্যকর ॥ বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বা বিশেষ পদ্ধতিতে বাস পরিচালনা। অর্থাৎ বিক্ষিপ্তভাবে বাসের অনুমোদন না দিয়ে পরিকল্পিত ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়। প্রতিটি কোম্পানির বাসের রঙ থাকবে পৃথক। গোলাপী, নীল, লাল, কমলা, সবুজ ও বেগুনী এই ছয়টি রঙ দ্বারা বাসগুলো চিহ্নিত করা হবে। একটি কোম্পানিতে এক রঙের বাস থাকবে। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাকে দুটি পদ্ধিতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো সিটি সার্ভিস বা আরবান ট্রান্সপোর্ট।

অপরটি হলো ঢাকার আশপাশের জেলার (আরএসটিপির রুট) বাসগুলোকে সাব আরবান ট্রান্সপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯টি ক্লাস্টারে (শ্রেণির) ২২ টি কোম্পানির মাধ্যমে ৪২টি রুটে নগর পরিবহন বাস সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এ সব জেলার বাস সার্ভিসকে সাব আরবান ট্রান্সপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৩টি মাদার কোম্পানির মাধ্যমে এসব জেলার সার্ভিসকে পরিচালনা করা হবে।

আন্তঃজেলার সকল বাস ঢাকার বাইরে ৪টি বাস টার্মিনালে থামবে। সেখান থেকে সাব আরবান ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে ঢাকা প্রবেশ করবে। ঢাকায় সিটি টার্মিনাল থাকবে ৮টি। সাব আরবান ট্রান্সপোর্টের বাসগুলো এ সব সিটি টার্মিনালে প্রবেশ করবে। সিটি টার্মিনাল থেকে আরব ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে নিদিষ্ট গন্তব্যে ভ্রমন করবে যাত্রীরা। এক্ষেত্রে রাজধানীর ২৯১ রুট কমিয়ে ৪২ রুটে এনে তা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এস এম সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘২০০৪ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তৈরি এসটিপি’তে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এত দিনেও আমরা ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি চালু করতে পারিনি। এর কিছু কারণ আছে। এর অন্যমত কারন হলো যথা স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তির অভাব। মেয়র আনিসুল হক বেঁচে থাকলে এতদিনে এটি বাস্তবায়ন হয়ে যেতে।

এখন ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’ মাধ্যমে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। বিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। সেখানের যথোপযুক্ত লোক নেই। তাই সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে দেরি হচ্ছে। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি ছাড়া ঢাকা গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা যাবে না বলে জানান তিনি। 
নগর পরিবহন চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা ॥ গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের এক সভায় আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে আবারো সবুজ রঙের ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক। এ সময় তিনি বলেন, ‘আগে ঢাকায় অপরিকল্পিত ভাবে ২৫৬টি রুট ছিল। সেটিকে কমিয়ে ৪২টি রুটে নিয়ে আসা হয়েছে।

২৫ ফেব্রুয়ারি পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা গ্রিন ক্লাস্টার বাস সার্ভিস চালু করব ৮টি রুটে। এই রুটের অন্য কোন কোম্পানীর বাস চলাচল করতে পারবে না। আগে কিভাবে চলাচল করছে সেটা এখন বাদ। নতুন করে আমরা সবুজ রঙের বাস দিয়ে এই সার্ভিস চালু করবে।’ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রুটেও বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।
তবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে সবুজ ক্লাস্টারের ৮ টি রুটে নয় ৬টি রুটে প্রথমিকভাবে ঢাকা নগর পরিবহন বাস সার্ভিস চালু কথা ছিলো কিন্তু তা নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে পুরাতন তিন ও নতুন করে আরও তিন রুটে মোট ছয়টি রুটে ঢাকা নগর পরিবহন বাস চালুর পরিকল্পনা করেছিলো ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। কিন্তু এর মধ্যে আবার সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কাউন্টার ভিত্তিক বাস চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে গুলিস্তান-আব্দুল্লাহপুর ও গাজীপুরে রুটের বাস গুলো দিয়ে এই সার্ভিস শুরু করবে মালিক সমিতি। তারা বিভিন্ন রুটের বাসগুলো এক একটি রঙ দিয়ে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাই মালিক সমিতির এই ঘোষণার কারণে সবুজ ক্লাস্টারে ঢাকা নগরপরিবহন বাস চালু নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাস মালিক সমিতি কোন পরিকল্পনা ছাড়া এভাবে কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু হলে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 
এর আগে ২০২১ সালে ২১ নম্বর রুট (ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-জিগাতলা-প্রেসক্লাব-মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর) পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে প্রথম সবুজ রঙের বাস সেবা চালু করে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’। এরপর আরও দুই রুটে এই বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছিলো। যাত্রীদের মধ্যে এই বাস সার্ভিসের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও অন্য বাস কোম্পানীর প্রতিযোগিতার কারণে এই সার্ভিসটি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সর্বশেষ গত ৫ আগস্টের এই সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। 
ইতিমধ্যে সরকারের ঘোষণা অনুয়ায়ী গ্রিন ক্লাস্টারের বাস চলাচলের জন্য মোট ৪০টিরও অধিক বাস কোম্পানির আবেদন সংগ্রহ করে ডিটিসিএ। এর মধ্যে ১২টি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে সংস্থাটি। তাদের বিষয়ে সব সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিআরটিএ ও জরিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এছাড়া যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা, কাউন্টার, যাত্রী ছাউনি এবং সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা টিম গঠন করা হয়েছে বলে ডিটিসিএ’র কর্মকর্তরা জানান। তবে বাস মালিকদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে আবার কাউন্টার সার্ভিস বাস চালুর ঘোষণায় অনেকটা ধোয়াশা তৈরী হয়েছে গ্রিন ক্লাস্টারের বাস সার্ভিস চালু নিয়ে। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধানের জন্য আগামী ২ ফেব্রুয়ারী সড়ক ও সেতু উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভার আয়োজন করেছে ডিটিসিএ। 
এ বিষয়ে ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা নগর পরিবহন নামের ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে সবুজ রঙের বাস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাস চলাচলের জন্য মোট ইতিমধ্যে ৪০টিরও অধিক বাস কোম্পানির আবেদন সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে অনেক ভালো কোম্পানী রয়েছে। প্রথামিকভাবে ১২টি কোম্পানিকে বাছাই করা হয়েছে।’ তবে কয়টি রুটে বাস চালু হবে। কিভাবে চলাচল করবে তা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ২ ফেব্রুয়ারী সড়ক উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিকভাবে পুরাতন বাস দিয়ে এই সার্ভিসটি পরিচালনা করা হবে। গ্রিন ক্লাস্টারে বা সবুজ রঙের ৮ রুট রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬ টি রুট ঢাকা নগর পরিবহন বাস সার্ভিস চালু করা হবে। এর জন্য যাচাই-বাছাই করে কয়েকটি কোম্পানির বাস নেওয়া হয়েছে। বাকি রুটগুলোও পর্যায়ক্রমে এক কোম্পানির আওতায় আনা হবে।’
কেন স্থায়ী হয় নি ঢাকা নগর পরিবহন ॥ এর আগে ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২১ নম্বর রুট (ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-জিগাতলা-প্রেসক্লাব-মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর) পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে প্রথম সবুজ রঙের বাস সেবা চালু করে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’। তখন মোট ৫০ টি বাস দিয়ে এই সার্ভিস চালু করা হয়। এর মধ্যে বেসরকারি ট্রান্সসিলভা কোম্পানীর বাস ছিলো ২০ টি এবং বিআরটিসি’র বাস ছিলো ৩০ টি।

তবে লোকসানের কথা বলে এক বছর চার মাস পর ট্রান্সসিলভা কোম্পানী নগর পরিবহনে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। তাদের যুক্তি ছিলো, ২১ নম্বর রুটে অন্যান্য গাড়ির কারণে ঢাকা নগর পরিবহনের তেমন যাত্রী হতো না। রুট পারমিট ছাড়াও অনেক বাস এই রুটে চলাচল করে। ঢাকা গণপরিবহনে বাস চালিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার মত লোকসান হয়েছে বলে জানান ট্রান্সসিলভা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ট্রান্স সিলভা কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সড়ক পরিবহন মালিক মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ আল লতিফ (খোকা) জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মেয়রের কথা মতো আমরা এই রুটে ২০টি গাড়ি দিয়েছি। এছাড়া বিআরটিসির ৩০ গাড়িসহ মোট ৫০টি বাস দিয়ে এই রুট চালু করা হয়। কিন্তু অন্যান্য গাড়ির কারণে যাত্রী তেমন হতো না। রুট পারমিট ছাড়াও অনেক বাস চলাচল করতো এই রুটে। এছাড়া কর্তৃপক্ষে যে প্রতিশ্রুতি ছিলো তা তারা রক্ষা করেনি।

পাশাপাশি বিআরটিসি বাসের কারণে আমাদের আয় কম হতো। আয়ের ৬৫ শতাংশ নিয়ে যেতো বিআরটিসি এবং ৩৫ শতাংশ দেওয়া হতো আমাদের। যা দিয়ে স্টাফদের বেতনেই হতো না। নগর পরিবহনে এক বছর চার মাস চালিয়ে আমাদের প্রায় দুই কোটি টাকার মত লোকসান হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে নগর পরিবহন থেকে বের হয়ে গেছি।’ 
পরিবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবরে ২২ রুট ঘাটারচর থেকে ডেমরার স্টাফ কোয়াটার পর্যন্ত হানিফ এন্টারপ্রাইজের অভি মটরসের ৪০ টি বাস চালু করা হয়। এছাড়া ২৬ নম্বর রুট ঘাটারচর থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত বিআরটিসি’র ৩০ বাস চালু করা হয়। কিন্তু চালুর কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায় ২২ নম্বর রুট। তবে বিআরটিসি সার্ভিসের মাধ্যমে ২৬ নম্বর রুট চালু থাকলেও  গত ৫ আগস্টের পর এই সার্ভিসটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

এভাবে গত ছয় বছরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়ররা ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’ মাধ্যমে গণপরিবহর ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর কোন উদ্যোগেই নেয় নি। এক এক সময় এক একজন মেয়র তাদের সুবিধাজনক ও লোক দেখানোর জন্য কিছু বাস সার্ভিস চালু করেছিলো। এর মধ্যে বিআরটিসি বাস দিয়ে চক্র সার্ভিস চালু করেছিলো তৎকালিন ডিএসসিসি’র মেয়র সাঈদ খোকন।

পরিবর্তিতে ঢাকা নগর পরিবহন নামের সবুজ রঙের বাস সার্ভিস চালু করেছিলো ডিএসসিসি’র সদ্য সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূল তাপস। কিন্ত এই বাস সার্ভিসগুলোর একটিও রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় নি। তাই বাস সার্ভিসগুলো স্থায়ী হয় নি বলে জানান গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)’র পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার মধ্যেই গুলশান এলাকায় ‘ঢাকা চাকা’ নামে পরিবহন চলে। ওই বাসগুলোতে কোনো আঁচড় নেই, চালকের মধ্যেও পাল্লাপাল্লির মনোভাব নেই। এর বাইরে পুরো ঢাকার দৃশ্য অন্য রকম।

বাস কোম্পানিগুলো পাল্লা দেয়ার কারনে ঘটছে দুর্ঘটনা, যানজট হয়, বিশৃঙ্খলা বাড়ে। বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি লাইনে অন্য কোন বাস চলাচল করতে পারবে না। গুটি কয়েক কোম্পানীর মাধ্যমে পুরো ঢাকা শহরের বাস সার্ভিস পরিচালনা করতে হবে। তা না হলে ঢাকাকে রক্ষা করা যাবে না।’
কাউন্টার বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা মালিকদের ॥ আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু করবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। প্রাথমিকভাবে আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন রুটের প্রায় ১৭ টি কোম্পনীর বাসে এই কাউন্টার সার্ভিস চালু করা হবে। পরবর্তীতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারীতে ঢাকার সব রুটে এই কাউন্টার সার্ভিস চালু করা হবে। চুক্তি ভিত্তিক বাস চলাচল বন্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল ইসলাম। 
তিনি জনকন্ঠকে বলেন, তিনটা রুটের সব বাসগুলো আমরা কাউন্টার ভিত্তিক পরিচালনা করবো। এর মধ্যে আব্দুল্লাপুর হয়ে যে সব বাস ঢাকায় চলাচল করে এগুলো আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি কাউন্টার ভিত্তিক করা হবে। এরপর মিরপুর, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর হয়ে যে সব বাস ঢাকায় চলাচল করে এগুলো ১০ ফেব্রুয়ারী কাউন্টার ভিত্তিক পরিচালনা করা হবে।

এর মাধ্যমে চুক্তি ভিত্তিক গাড়ী চলাচল বন্ধ হবে। এছাড়া গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা কিছুটা দূর হবে। এ সব কাউন্টার ভিত্তিক বাসগুলো এক একটি রুটের কালার এক এক রকমের হবে। এই কালারগুলো ডিটিসিএ’র রুট অনুযায়ী করা হবে বলে জানান তিনি।

×