ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

অপরাধ জগতের মাস্টারমাইন্ড হাসিনার প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

অপরাধ জগতের মাস্টারমাইন্ড হাসিনার প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তাকে রাজনৈতিক ব্যানারে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো ফেনীর অবিভাবক হিসেবে। দুর্নীতি দায়ে দুদকের মামলার আসামি হয়ে ২০০৯ সালে উপসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান নাসিম। ২০০১ সালে হাসিনা বিরোধী দল হলেও তার প্রটোকল অফিসার ছিলেন নাসিম। আর এই অফিসার পদটাই তার জীবনে আলাদিনের চেরাগ হিসেবে আবির্ভূত হয়। প্রশাসনের বদলি, পদায়ন থেকে শুরু বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানীর লাইসেন্স করে দেওয়া কাজ করে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। 

জানা যায়, চাকরি ছেড়ে এমপি হওয়ার জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ান তিনি। তবে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে পথের কাটা মনে করতেন তিনি। তাই একরামুলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্লান করেন শেখ হাসিনার এক সময়ের প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম। দল ক্ষমতায় থাকার পরও ২০১৪ সালের ২০ মে সকালে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় গাড়িতে চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে কুপিয়ে গুলি করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর এই পুরো ঘটনাটি ঘটে আলাউদ্দিন নাসিমের প্লান অনুযায়ী। অথচ তিনি বরাবর থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুরো ঘটনাটি ঘটে আলাউদ্দিন নাসিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী। অথচ তিনি বরাবর থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কে বা কারা, তা নিয়ে অনেক রহস্যই ছিলো উদঘাটনের বাইরে। তবে মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহের তালিকা ছিলেন ফেনীর আলোচিত-সমালোচিত আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

ঠান্ডা মাথার খুনি হিসেবে সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে আলাউদ্দিন নাসিমের নাম। একাধিক মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকলেও  সবসময় থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ তার সঙ্গে বেয়াদবি করলে তার একমাত্র শাস্তি ছিল তার প্রাণনাশ।

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কে বা কারা, তা নিয়ে অনেক রহস্যই ছিলো উদঘাটনের বাইরে। তবে মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহের তালিকা ছিলেন ফেনীর আলোচিত-সমালোচিত আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একরামের ওপর হামলা হবে, তার গাড়ি ভাঙচুর ও জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়ে অপদস্থ করা হবে- এ কথা ফেনীর আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই জানতেন। তবে খুন করার পরিকল্পনার কথা জানতেন অল্প কজন।

একরাম হত্যার পর জয়নাল হাজারী ঢাকায় বিভিন্ন টেলিভিশনে ও পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে একরাম হত্যার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দীনকে ফেনীর রাজনীতির নিয়ন্ত্রক উল্লেখ করে বলেন, ‘আলাউদ্দীন নাসিমকে বলতে চাই, তুমি এই খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করো না। তুমি ফেনীর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করো। তোমার সাথে শত্রুতা করব না, বিরোধিতা করব না। খুনিকে প্রশ্রয় দিলে খুনের দায়দায়িত্ব তোমার ওপর যাবে। এই খুনের দায় তুমি এড়াতে পারো না।’

জুলাই-আগস্টে বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফেনীর মহিপালে তার নির্দেশে গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। তবুও দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন নেই তার বিরুদ্ধে। মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে অনেকের নামে মামলা হলেও এখনও সেখানে আলাউদ্দিন নাসিমের নামে কোনো মামলা হয়নি। হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে দেশের বাইরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করলেও তার বিরুদ্ধে এখনও মামলা হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেন তিনি। প্রতিমাসে ব্যাংকে এসএস পাওয়ার থেকে মোটা অংকের চেক নাসিমের এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ডা. জাহানারা আরজুর নামে জমা হতো। এমন একটি চেকের কপি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

এদিকে, ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র করে চলছে ফ্যাসিস্ট মাদক সম্রাট আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। অবৈধভাবে ভারতের কলকাতা পালিয়ে পতিত হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন নাসিম। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভারতের ভূইফোড় মিডিয়ার গুজব প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সামনে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছেন তিনি। আলাউদ্দিন নাসিমের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের গুজব সেল। কারণ, হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার আলাউদ্দিন নাসিম। দুই বোনের চোরাই টাকা তার জিম্মায় রয়েছে। আর সেই অর্থ ব্যয় করছে ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ করার মিশনে। বাংলাদেশ থেকে যারা পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন তাদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় তদারকি করছেন অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন নাসিম।

তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ফেনীর সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছি। তার অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছি। আমরা তার বিষয়ে সার্বিকভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।’

সূত্র: https://youtu.be/Lh1oUzYfhMc?si=ZT-0iiY9XpJgwDIV ; https://www.youtube.com/watch?v=bQ7A52NiacE এবং https://youtu.be/ZfxmnCznJCw?si=fVOuevZoUz8C-9_S  

এম হাসান

×