ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

বেনাপোল দিয়ে

যাত্রী যাতায়াত ৮৩ শতাংশ কমেছে, বাণিজ্যে প্রভাব পড়ার শঙ্কা

আবুল হোসেন , বেনাপোল :

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

যাত্রী  যাতায়াত ৮৩ শতাংশ কমেছে, বাণিজ্যে প্রভাব পড়ার শঙ্কা

ছবি : সংগৃহীত

দেশের সব চেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল  দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে  যাত্রী যাতায়াত ৮৩ শতাংশ কমে গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা আরো কমে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও  শূণ্যরেখায় গিয়ে দেখা গেছে, বন্দরের কোথাও তেমন কোলাহল নেই। যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার চিরচেনা দৃশ্যও চোখে  পড়েনি। ইমিগ্রেশনের অধিকাংশ কাউন্টারে কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কুলি শ্রমিকদের তেমন ব্যস্ততা নেই। এক ধরণের সুনশান নিরাবতা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে কয়েকজন যাত্রীর আসা যাওয়া চোখে পড়ছে। 

বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে,পরশু বুধবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই হাজার ২৮১ যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এরমধ্য ভারতীয় নাগরিক এক হাজার ৩৩৭ জন। এছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত যাত্রী যাতায়াত করে এক হাজার ৯৪৩ জন।  এরমধ্য ভারতীয় নাগরিক ছিল ১১৯জন। এর আগে গত সোমবার এ রুটে যাত্রী যাতায়াতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৯৭১ জন।  এরমধ্যে ভারতীয় নাগরিক ছিল ৯৪৫ জন। গত বছর জুলাই মাসের পর থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। আগস্টের আগ পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী  যাতায়াত করতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন পুলিশের  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা জানান, চিকিৎসা ছাড়া সব ধরণের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে ভারত সরকার। এজন্যে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী গমণাগমণ ৮৩ শতাংশ কমেছে। এখন ২ হাজারে মধ্যে যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করছে। ভ্রমণ ও বাণিজ্য ভিসা যাদের দেওয়া আছে তাদের মেয়াদও আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়ে যাবে। তখন যাতায়াত আরো কমে যাবে'। 
এদিকে বাণিজ্য ভিসাও বন্ধ রয়েছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

বেনাপোল আমদানি রপ্তানি কারক সমিতির সভাপতি  বলেন, 'বেনাপোল বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার  মধ্যে শাড়ি কাপড়, থ্রি পিচ,ফলমূল  ও শিল্পকল কারখানার  যন্ত্রপাতির পরিমাণ বেশি। আমদানিকারকেরা ভারতে গিয়ে দেখেশুনে এসব পণ্যের এসসি খোলে। ভিসা বন্ধ থাকায় তারা তো ভারতে যেতে পারছেন না। এতে আমদানি পণ্যে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে'।

এখন যারা যাতায়াত করছে তাদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগি। চিকিৎসার জন্যে ভারতে যাচ্ছেন।আর ওপার থেকে যারা এদেশে আসছেন  তাদের মধ্যে 'লাগেজ পার্টি'র লোকজন রয়েছে বেশি। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন এলাকার বেশ কয়েকজন দোকানদার নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে জানান, বর্তমানে ভারত থেকে যারা এ রুটে  আসে তাদের অধিকাংশ মহিলা। তারা লাগেজ ব্যবসায়ী এবং  
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগা এলাকার বাসিন্দা। এরা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে পাসপোর্ট যোগে বাংলাদেশে এসে মালামাল বিক্রি করে দিনে দিনে ফিরে যায়। এরকম একজন যাত্রীর নাম হাফিজা মন্ডল। বৃহস্পতিবার  সকালে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে তিনি  বাংলাদেশে আসেন। তার সাথে থাকা ব্যাগে কিছু ভারতীয় জিরা কিসমিস  চকলেট থাকে সেগুলো বেনাপোলের নির্দিষ্ট দোকানে দিয়ে আবার বিকেল নাগাদ তিনি ওপারে ফিরে যাবেন বলে জানান হাফিজা। এটাই হাফিজার জীবিকা। 

হাফিজা মন্ডলের মত পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্তত ২০০ নারী এখন প্রতিদিনই এপারে আসেন। তাদের সবার কাছে ভারতীয় কিছু পণ্য থাকে। বন্দর সংশ্লিষ্টদের  কাছে তারা 'ল্যাগেজ পার্টি' নামে পরিচিত।  বাংলাদেশ থেকেও সমপরিমাণ নারী এই 'ল্যাগেজ পার্টি'র কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ভারত সরকার বাংলাদেশীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করার আগে এই সংখ্যা ছিলো প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের মত। 

 বেনাপোল ইমিগ্রেশনে গিয়ে দেখা গেলো, হাফিজা মন্ডলসহ দুই নারী ইমিগ্রেশনের খোলা আঙিনায় বসে কথা বলছেন। তারা বিমর্ষ ক্লান্ত। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেলো, তারা একসাথে কয়েকজন বনগাঁ থেকে বেনাপোলে এসেছেন। তাদের কাছে ছিলো, কিসমিস, জিরা, চকলেট। বেনাপোলের নির্দিষ্ট জায়গা বিক্রি করে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গীরা ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট যাচাই বাছাইয়ের কাজ করছেন। এই ফাকে তারা সেখানে বসে গল্প করছেন। 

হাফিজা মন্ডল বলেন, 'আমার বাড়ি পেট্রাপোলের ওপারে বনগায়। আমি প্রতিদিন সকালে বেনাপোলে আসি। আবার বিকালে ফিরে যায়। সাথে করে কিছু কিসমিস, জিরা চকলেট নিয়ে আসি। বিক্রি করে আবার ফিরে যায়'। হাফিজা মন্ডলের সাথে থাকা আছিয়া মন্ডল বলেন, 'কাজটি এখন আর আগের মত সহজ নেই। লাইন খুব খারাপ। কাস্টমস -বিজিবি খুব ঝামেলা করে। সাথে থাকা মালামাল প্রায় নিয়ে নিচ্ছে তারা। আমরা গরিব মানুষ। কি করে খাবো'।
 ল্যাগেজ পার্টির কাছ থেকে উদ্ধার করা কয়েক শত ভারতীয় কম্বল ইমিগ্রেশনেরর দ্বিতীয় তলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। 

জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, 'কাস্টমস কর্মকর্তারা এসব কম্বল জব্দ করে রাখা হয়েছে। এসব কম্বল একদিনে জব্দ করা না। কয়েকদিন ধরে জব্দ করে রাখা। এসব কম্বল বিভিন্ন এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হয়'। ওই কর্মকর্তা জানান, 'ল্যাগেজ পার্টি'র একজন মাসে কত বার কি ধরণের পণ্য কতটুকু আনতে পারবেন কাস্টমস থেকে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। তার ব্যত্যয় ঘটলে ধরাধরি করা হয়।

হাফিজাদের 'ল্যাগেজ'র পণ্য বেনাপোল আন্তর্জাতিক পাসেঞ্জার টার্মিনালের পাশের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ বেনাপোলে গিয়ে ওসব দোকান থেকে ভারতীয় পণ্য কিনে নিয়ে যায়। 

জাফরান

×