বরিশালের রূপাতলীতে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলে ১৬ রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট চলছে
দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক জেলায় বাস শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। বরিশাল, পটুয়াখালী, আমতলী ও কলাপাড়ার বাস শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ধর্মঘটের ডাক দেয়। তবে ভোগান্তির কারণে পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীরা এই বাস ধর্মঘট দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের।
বরিশাল নগরীর রূপাতলীতে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিসহ শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট শুরু করেছে বাস শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ১৬ রুটে যান চলাচল।
পাশাপাশি শুধু বাসই নয়, দূরপাল্লায় যাত্রী নিতে চাওয়া থ্রি হুইলারগুলোও আটকে দিচ্ছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এতে করে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার ভোর থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এতে করে বরিশাল-খুলনা, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, ভা-ারিয়া, ঝালকাঠি, নলছিটি, বেতাগী, বরগুনা, লেবুখালি, বাউফল, দশমিনা, পটুয়াখালী, আমতলী, কুয়াকাটা ও ভোলা রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
রূপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, শ্রমিকদের কাজ ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য বরিশাল বিভাগের ১১টি বাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের ঐক্য পরিষদ মিলে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে করে ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা আজীবন মার খেয়ে যাচ্ছেন আর সকলকে ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে বিনা কারণে আমাদের ওপর বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দেবে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের আইডি কার্ড দেখিয়ে পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনেরও হাফ ভাড়া দেবে সেটাও কি মেনে নিতে হবে।
আবুল কালাম বলেন, ছাত্ররা বুধবার দলবদ্ধভাবে এসে আমাদের ওপর যেভাবে হামলা করেছে তাতে আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমাদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও কেউ দেখবে না। এসব ভয় থেকেই শ্রমিকরা আর সড়কে গাড়ি চালাতে চাচ্ছেন না।
রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, মঙ্গলবার ঝালকাঠি রুটের একটি বাসে বিএম কলেজের এক ছাত্রীর হাফভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিচার চাইলে শিক্ষার্থীরা ঝালকাঠি মালিক সমিতির কাছে চাইতে পারত। কিন্তু রূপাতলীতে বিক্ষোভ করে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা ভয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে চাচ্ছে না।
মঙ্গলবার বিকেলে ঝালকাঠি রুটে এক ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ ও অবরোধ করে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থানকারী বাস ভাঙচুর করে এবং টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
তারা অসৌজন্য আচরণকারী শ্রমিক, হামলাকারী শ্রমিকদের গ্রেপ্তারসহ আট দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে রাত বারোটার দিকে কর্মবিরতির ঘোষণা করেন পরিবহন শ্রমিকরা।
কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘটের কারণে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা বিপাকে পড়েছেন। এখান থেকে সারা দেশের সঙ্গে বাস যোগাযোগ বন্ধের কারণে এমন সমস্যায় পড়েছেন মানুষ। এছাড়া এই এলাকার হাজারো যাত্রীর চরম ভোগান্তি হয়েছে। পর্যটক আশরাফ উদ্দিন জানান, দুই দিনের জন্য কুয়াকাটা এসেছেন। বুধবার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বাস ধর্মঘটে আটকে পড়েছেন। এভাবে অধিকাংশ হোটেলে কমবেশি পর্যটকরা আটকে পড়েছেন।
আমতলী, বরগুনা ॥ চলমান আঞ্চলিক বাস শ্রমিকদের ধর্মঘটে দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধ লক্ষ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। বুধবার পথে পথে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। দ্রুত শ্রমিক ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। বুধবার সকাল থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা, তালতলী সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যস্থানে যেতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধলক্ষ মানুষ। নিরুপায় হয়ে কুয়াকাটা, পটুয়াখালী, আমতলী ও তালতলীর যাত্রীরা বিকল্প উপায়ে টেম্পো ও মাহেন্দ্র গাড়িতে গন্তব্যস্থানে চলাচল করছেন। অনেক যাত্রীকে গাড়ির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষ করতে হয়েছে। এদিকে এ সুযোগে অটো, মাহেন্দ্র গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে।