ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তারেক রহমান

ব্যক্তিস্বার্থে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে ছাড় নয়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ও নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: ০০:০২, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

ব্যক্তিস্বার্থে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে ছাড় নয়

খুলনা বিভাগের কর্মশালায় বুধবার ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণ যদি আপনার পেছনে না থাকে, তাহলে আপনি কিসের নেতা। মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এই আস্থা নষ্ট করার জন্য যদি কেউ কোনো কাজ করে, তা হলে তাকে তো আমি টানব না। এখানে দলকে স্বার্থপর হতেই হবে। কোনো ব্যক্তি, কর্মী, নেতার কারণে যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, তাকে আমরা ওন (নিজের) করতে পারব না।

আমরা বহু ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। বহু অত্যাচার, নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কেউ নিজের স্বার্থ নিয়ে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব নয়। কেউ কেউ বলে যারা অপরাধ করেছে, ভুল করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। এতে কি হবে। কি হবে সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা যতটুকু জানছি, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যখন যেটা জানব ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি।
বুধবার বিকেলে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের চৌরাস্তা মোড়ে একটি অভিজাত হোটেলে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, কেউ যদি বলে, আপনি দল থেকে বের করে দিলেন, এতে কি হবে? সমাজে ভালো-মন্দ সব ধরনের মানুষ আছে। আমরা খারাপ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই না। অন্তত এ ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার থাকব। মুখে বলব একটা, কাজে করব আরেকটা, তা নয়। আমরা যা মুখে বলছি, তা আমরা কাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করব। তার প্রতিফলন থাকবে। একটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন হিসেবে যাতে সর্বোচ্চ করতে পারি, আমরা সেটিই করছি।

আমরা যদি সরকারে থাকতাম, তাহলে আমরা যেটা করতে পারতাম, দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। এই মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থানে নেই। কাজে সেই অবস্থানে যদি আমাদের যাওয়ার সুযোগ হয়, আজকে যেমন শুধু দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছি। তেমন সরকারে থাকলে অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, আমরা মুখে যেটা বলি, কাজেও সেটির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।
৫ আগস্ট থেকে দলের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নিয়ে জনগণের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক কর্মী, নেতারা যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়, জনগণের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করলে কি পরিণতি হয়, আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩১ দফার প্রশিক্ষণ আমরা করছি। ৩১ দফা জনগণের কাছে নিয়ে যাব।

৩১ দফা আমাদের অনুধাবন করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণ থেকে যদি দূরে সরে যাই, তা হলে ওই ৫ আগস্টের পরিণতি আমাদের হবে। ৫ আগস্টের পরিণতি থেকে দূরে থাকতে হলে, জনগণের সঙ্গেই থাকতে হবে। আমরা সবাই কষ্ট করছি। আগামী দিনে যাতে দল সুফল পায়, আপনি আমি সুফল পাই, সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল¬াহ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ। এ কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কর্মশালায় যশোর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৮ শতাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। 
ঝিনাইদহ ॥ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এই পরিবর্তন কোনো জাদু বা ম্যাজিক নয় যে, বলবো আর হয়ে যাব। এ জন্য জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে।

আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণ, জনগণ ও জনগণ। শুধু তাই নয়, এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সকল জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব। আমি প্রতিবারই বলছি সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সকল ষড়যন্ত্র মোবাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। 
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি আয়োজিত শহরের জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্কের একটি অডিটরিয়ামে বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 
তারেক রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও গত ১৬ বছর গুম খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশে বলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হবে। তালিকা করে শহীদ ও আহতদের খোঁজখবর নেওয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দলীয় ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি স্থানীয় জোহান ড্রিম ভ্যালি মিলনায়তনে এই কর্মশালায় জেলার ৬ উপজেলা, পৌরসভা থেকে বিএনপি, যুবদল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ৬৮০ জন নেতাকর্মী এ কর্মশালয় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার প্রথম পর্বে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া কর্মশালায় বিকেল ৪টার পরে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। এরপর তিনি কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তও বলেন, বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়ে নিজে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। আবার দেশ পরিচালনায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

দেশের মানুষকে সংগঠিত করে কিভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করতে হয় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই দেশের প্রতিটি কম-বেশি নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। এটি বিএনপির সবচে বড় অর্জন। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এটি স্মরণীয় হয়ে থাকিবে। 
তিনি বলেন, ’৭১ সালে যুদ্ধের সময় কোনো দল বর্ডার টপকে ভারতে আমোদ প্রমোদ করে কাটিয়েছেন। আবার কোনো দল স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন দেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করাও এই ইমানের মধ্যে পড়ে। তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুন গুম, হামলা মামলার শিকার হয়েছেন।

দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপির দ্বারাই হবে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠে ঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহীদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই। 
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ’৭১ সালে একটা দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গিয়েছিল। আরেকটি দল মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করেছে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের সব নেতাকর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। নিজেদের জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে। নিজেদের  শেুাধরাতে হবে। দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার।

আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে এক চ্যালেঞ্জ। কাজেই, আগামীতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না। 
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সকল প্রতিশোধ নেব। আমি মনে করি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এ জন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি। 
৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধির করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব। 
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কু-ু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনার সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

কর্মশালায় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন, মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, সাজেদুর রহমান পাপ্পু, আহসান হাবীব রনক, আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, হুমায়ুন বাবর ফিরোজ, আসিফ ইকবাল মাখন, এসএম সমেনুজ্জামান সমেন, মুশফিকুর রহমান মানিক ও রাসেল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
তারেক রহমান বলেন, পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের প্রশ্রয়ে কিছু মানুষ ঋণের নামে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকার ব্যাংকগুলোকে আইন ও ব্যাংকিং নীতির আলোকে ঢেলে সাজানোর কাজ করছে। এখানে বড় চ্যালেঞ্জ, জনগণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরাতে সরকার কাজ করবে।

আমরাও এটা নিয়ে কাজ করব ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের দলীয় আদর্শের না হওয়ায় লাখ লাখ যুবক চাকরি পায়নি। বিএনপি সেই সকল যুবকদের নিয়ে চিন্তা করছে। পতিত স্বৈরাচারের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। 
তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পরিবারে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড দেব। যে কার্ডের মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্য প্রতিটি পরিবারের মাঝে যেন পৌঁছে দিতে পারি। আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ নারী। নারীদের সুরক্ষার জন্য দলীয়ভাবে আমরা সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হবে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের নারীরা এখন সচেতন। এখন নারীদের দৃঢ়ভাবে দেশ গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। 
তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এর পেছনে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের স্বার্থ জড়িত ছিল বলে ধারণা করা যায়। আমরা স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। কারণ স্বনির্ভর দেশ গড়তে সুস্থ সবল নাগরিকের গুরুত্ব অনেক বেশি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, ৫% এর বেশি কোটা থাকা উচিত নয়। ফ্যাসিস্ট সরকার কোটা প্রথার লাগামহীন ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়েছিল।

বিএনপি সেটা করব না। আমি বারবার বলেছি, কোটা নয় মেধার মূল্যায়ন করা হবে। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্তরা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা বসে নেই। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রদান করা হবে।
নড়াইল ॥ বিএনপির নেতাকর্মীদের যে কোনো মূল্যে দেশের মানুষের আস্থা ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে নড়াইল জেলায় বিএনপির কর্মশালায় ভার্চুুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন তিনি। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নড়াইলের তিন উপজেলার বিভিন্ন পর্ষায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। 
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরও বলেন, আসুন আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের মানুষের আস্থা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। অন্যরা আমাদের সহযোগিতা করবেন, কিন্তু দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি আমাদের। দায়িত্ব আপনার, আপনাদের সকলের।

দায়িত্ব দেশকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা, দেশের মানুষের রাজনৈতিক এবং অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠা করা ও রক্ষা করা। সেটিই হোক আজকের কর্মশালার শপথ। প্রথমে নিজের ঘরকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না। একইসঙ্গে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যে রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা একসঙ্গে সংগ্রাম করেছি, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছি, জেল-জরিমানা সহ্য করেছি-  সেই সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

কারণ আমাদের ৩১ দফা, বিএনপির ৩১ দফা না, এই ৩১ দফা সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের। দলগুলোর মধ্যে বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। অন্য দলগুলোও বলছে বিএনপি বড় দল। বড় দল হিসেবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বিএনপির। জনগণের আস্থা ধরে রাখা, ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা। 
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি নীতিতে বিশ্বাস করি, আপনারা যে রকম অত্যাচারিত-নির্যাতিত হয়েছেন, আমি ও আমার পরিবারও হয়েছে ওই পলাতক স্বৈরাচার দারা। যে কোনো নির্যাতিত মানুষ তার নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই। তবে আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। কারণ সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

তাঁরা শিশুদের শিক্ষিত, বেকারদের কর্মসংস্থান, খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ, শিল্পায়ন ও মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই কাজগুলোকে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাই আমি মনে করি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর প্রতিশোধ সেদিনই সফল হবে,  যেদিন বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই ৩১ দফাকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব। একমাত্র সেদিনই অগণতান্ত্রিক যে অশুভ শক্তি, যারা বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে চাই তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিশোধ সফল হবে। 
নড়াইল প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মাহাদী আমিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক শাম্মী আক্তার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন  বিষয়ক সহ-সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলী, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম, কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি স ম ওয়াহিদুজ্জামান মিলু, জেলা যুবদলের সভাপতি মশিয়ার রহমান প্রমুখ।

×