ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ধর্মঘট ॥ তৃতীয় দিনও ডিপো থেকে তেল তোলা যায়নি

পাম্পে তেল না পেয়ে খুলনা ও যশোরে বিপাকে চালকরা

স্টাফ রিপোর্টার খুলনা ও যশোর অফিস

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

পাম্পে তেল না পেয়ে খুলনা ও যশোরে বিপাকে চালকরা

পাম্পে তেল না পেয়ে খুলনা ও যশোরে বিপাকে চালকরা

তৃতীয় দিনের মতো নগরীর খালিশপুরের কাশিপুরে অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ রাখে ট্যাঙ্ক লরি শ্রমিকরা। তারা বলেছেন, খুলনা বিভাগীয় ট্যাঙ্ক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমের মুক্তি না হওয়া তাদের এই কর্মবিরতি।

এর ফলে বন্ধ রয়েছে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলোসহ ১৬ জেলায় তেল সরবরাহ। শ্রমিক নেতাদের দাবি নেতাকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি আগামীদিনেও অব্যাহত থাকবে। এতে করে তেলশূন্য হয়ে পড়েছে পাম্পগুলো। ফলে পাম্পে এসে তেল না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে গাড়িচালক ও তেল সংগ্রহকারীরা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো কোনো পাম্পে এক এক করে জ্বালানি তেলশূন্য হতে থাকে। নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ে কেসিসি পেট্রোলিয়াম পাম্পের কর্মী ফজলে রাব্বি রাজু বলেন, সকাল ১০টার মধ্যে ডিজেল ও অকটেন শেষ হয়ে যায়। আর পেট্রোল শেষ হয় দুপুরের মধ্যে। তারপর আমরা পাম্প বন্ধ করে দিই।

আর মেঘনা মডেল পাম্পের তেল সরবরাহকারী রুহুল আমিন বলেন, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিত ছুটির কারণে তেল উত্তোলন করা যায়নি। আর বরিবার সকালে অল্প কিছু তেল পেয়েছিলাম। দুপুর থেকেই শুরু হয় কর্মবিরতি। সেই থেকে তেল না পাওয়ায় যা ছিল বিক্রি করেছি। কিন্তু দুপুর থেকে পাম্প ড্রাই হয়ে গেছে। তাই পাম্প বন্ধ  রেখেছি। আবার যখন তেল পাব তখন পাম্প খুলব।

অপরদিকে দুপুরের পর যারা পাম্পে তেল নিতে আসেন তারা পড়েন বিড়ম্বনায়। দেবাশীষ নামে এক চিকিৎসক বলেন, পাম্পে তেল  নেই। গাড়িতেও তেল কম। জরুরি অপারেশনে যেতে হবে। বুঝতে পারছি না হাসপাতালে পৌঁছাতে পারব কিনা। আর পারলেও বাসায় ফিরতে পারব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আর মোটরসাইকেল চালক মোবারক হোসেন বলেন, ব্যবসার কাজে অনেক জায়গায় যেতে হবে।

চলতে না পারলে তো অনেক কিছু আমার বন্ধ হয়ে যাবে। সমাধানের মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। তোবারক হোসেন তেল না পেয়ে ক্ষোভে বলেন, জনগণের কষ্টের কথা ভাবার লোকের অভাব। সকলে যে কোনো মূল্যে নিজেদেরটুকু অর্জন করতে চায়।
কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভে তারা তাদের নেতার মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের নামে অন্য যে সকল মামলা চলমান রয়েছে সেগুলোও প্রত্যাহারের দাবি জানান। এসময় তারা বলেন আমাদের দফা এক, দাবি এক, আলী আজিমের মুক্তি।
ট্যাঙ্ক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এনাম মুন্সী বলেন, আজও আমরা আমাদের নেতার জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি। মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত থেকে জজ আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২ তারিখে নির্ধারণ করেছেন। তাই আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকছে।

তবে বুধবার মালিক সমিতির সঙ্গে যৌথসভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তিনি আরও বলেন, অনেক আগে বিএনপির ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় মামলায় সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমকে বরিবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে কেএমপির ডিবি পুলিশ। যা মিথ্যা। কেননা এই ঘটনা আলী আজিম জানতেন না। মামলা হওয়ার পর তিনি জেনেছেন।
অপরদিকে জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির খুলনা বিভাগীয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক মো. মামুন গাজী বলেন, শ্রমিকদের আমরা জোর করতে পারি না। তাদেরও নিরাপত্তা আছে। তাই তারাই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে। তবে তাদের কর্মবিরতির কারণে প্রায় সকল পাম্পই তেলশূন্য হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র শ্রমিকরাই নয় দেশের পটপরিবর্তনের পর অনেক মালিকদের নামেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ থেকে আমরাও মুক্তি চাই। কেননা এভাবে চলতে থাকলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য প্রশাসনকে বড় ভূমিকা নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
তেলশূন্য হতে চলছে যশোরের পাম্পগুলো ॥
ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে যশোরের পাম্পগুলোতে  তেলের সংকট  দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ পাম্পে ডিজেল  শেষ হয়ে  গেছে এবং দুপুর নাগাদ  পেট্রোলও ফুরিয়ে যাচ্ছে।
ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে যশোরের পাম্পগুলোতে  তেলের সংকট  দেখা দিয়েছে।
 পেট্রোল পাম্প মালিকরা জানিয়েছেন, খুলনার ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে  গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে  সোমবার  থেকে  তেল উত্তোলন বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এর প্রভাব পুরোপুরি পড়েছে যশোরের ৭১টি পাম্পে। তারা জানান মঙ্গলবার সকালে অধিকাংশ পাম্পের ডিজেল  শেষ হয়ে  গেছে এবং ৩০টি পাম্পে সম্পূর্ণ  তেল  নেই। বাকি পাম্পগুলোতে অকটেন ও  পেট্রোল মিশিয়ে সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে, তবে দুপুরের পরও এই সার্ভিসও বন্ধ হয়ে  গেছে। এ কারণে দ্রুত সমস্যার সমাধান  চেয়েছেন পাম্প মালিকরা। 
যাত্রীক  পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার হুমায়ুন কবীর জানান, তাদের পাম্পে পেট্রোল ও অকটেনের ধারণক্ষমতা ২০ হাজার লিটার, আর ডিজেলের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার ৬৭০ লিটার। সবশেষ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) তারা  তেল উত্তোলন করেছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তাদের ডিজেল  শেষ হয়ে  গেছে, তবে  পেট্রোল ও অকটেন মিলিয়ে ২ হাজার লিটার  তেল অবশিষ্ট ছিল, বিকেলের দিকে তা শেষ হয়ে গেছে। 
মনির উদ্দিন  পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার আক্তার  হোসেন জানান, তাদের ডিজেলের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার লিটার, যা পুরোপুরি  শেষ হয়ে  গেছে। ১০ হাজার ৮৬৮ লিটার  পেট্রোল এবং ৬ হাজার লিটার অকটেনের মধ্যে সামান্য  তেল অবশিষ্ট ছিল,  সেটা সন্ধ্যার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। 
বাংলাদেশ জ্বালানি  তেল পরিবেশক সমিতি খুলনা বিভাগের সভাপতি সাজ্জাদুল করিম কাবুল জানান, যশোরের ৭১টি পাম্পের মধ্যে ৩০টি পাম্প সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে  গেছে। খুলনার ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকদের সাধারণ সম্পাদক জামিন না পাওয়ার পর এই সংকটের সমাধান হওয়া কঠিন বলে তিনি মনে করছেন। এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে যানবাহন চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন  যে,  তেল না পাওয়ায় তাদের অনেকের নির্ধারিত ট্রিপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং তারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন।

×