ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

চাঁদপুরে আবাদি জমির মাটি কাটায়  হুমকিতে ফসল উৎপাদন 

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ২২:০৬, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

চাঁদপুরে আবাদি জমির মাটি কাটায়  হুমকিতে ফসল উৎপাদন 

.

নদী বেষ্টিত জেলা চাঁদপুরের অধিকাংশ মানুষই কৃষি ও মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অবৈধভাবে ভরাট ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় কমে যাচ্ছে এসব কৃষি জমি। এর ওপর অধিকাংশ বসতি পাকা ভবন নির্মাণ হওয়ার কারণে বেড়েছে ইটের চাহিদা। যার ফলে বছরের এই সময়টাতে ইটভাঁটিতে ব্যবহারের জন্য অবাধে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির ওপরি অংশের উর্বর মাটি। এতে খাদ্য উৎপাদন হুমকি এবং জমির উর্বরতা হারাচ্ছে, মতামত কৃষি বিভাগের। এদিকে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এসব বন্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের।  
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় ৯৮ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে কমবেশি ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদির উৎপাদন হয়। তবে এসব ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাঁটি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যমতে প্রায় অর্ধশত ইটভাঁটি অবৈধ। আর বৈধ এবং অবৈধ মিলিয়ে সবগুলোতেই ইট তৈরির জন্য কাটা হচ্ছে কৃষি জমির মাটির ওপরের স্তর।
সরেজমিন জেলার ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে বিগত সময়ে অনুর্বর ও অনাবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাঁটিতে ব্যবহার হলেও এখন গোপনে এবং প্রকাশ্যে কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এসব উপজেলায় মাটি কাটার কাজে জড়িয়ে পড়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারাই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভাঁটি মালিকদের যোগসাজশে ফসলি জমির ওপরি অংশের উর্বর মাটি উজাড় করছে।
শাহরাস্তি উপজেলার চিকুটিয়া ব্রিজ সংলগ্ন ফসলি মাঠের সেচ ম্যানেজার মো. আকবর জানান, তাদের মাঠের কিছু জমি উঁচু-নিচু আছে। যে কারণে গত দুই বছর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। জমির ওপরি অংশের মাটি কাটা অবৈধ জেনে কেন কাটা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাঁটি মালিকদের সঙ্গে চুক্তি এবং এই কাজে বিনিয়োগ হওয়ার কারণে মাটি কাটা হচ্ছে। তবে আগামী বছর থেকে আরা কাটবেন না বলে তিনি জানান। ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের মানিকরাজ এলাকার মেসার্স মানিক রাজ ব্রিক্সের পরিচালক মিরন খান বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে লাগানোর বৈধতা নেই জানি। কিন্তু ইট তৈরির জন্য মাটি পাব কোথায়।  যে কারণে বাধ্য হয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নেওয়ার ফলে এটি পূর্বের অবস্থায় এবং উৎপাদনযোগ্য হতে সময় লাগে প্রায় ১৫-২০ বছর। কিন্তু এই সময়েও আবাদের জন্য এসব জমি পূর্বের কাছাকাছি যেতে পারে, কিন্তু আগের মতো উর্বরতা থাকে না। জমির ওপরের ৬ ইঞ্চির মধ্যেই থাকে বেশি উর্বরতা। কাটা হচ্ছে  আরও অনেক বেশি। কৃষি জমিগুলো রক্ষায় আমাদের মাটি কাটার জন্য যে আইন রয়েছে, তা বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত বলেন, কৃষি জমির ওপরি অংশের মাটি কাটা হচ্ছে এমন তথ্য এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে প্রশাসনিক নানা কাজের মধ্যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল-ইমরান খান বলেন, জমি ভরাট করা যাবে আবার প্রয়োজনে পুকুর কিংবা দীঘিও করা যাবে। তবে ওই ব্যক্তি তার জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) এর নিকট আবেদন করতে হবে। 

×