ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

ফটিকছড়িতে যত্রতত্র করাতকল উজাড় হচ্ছে বন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:২১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

ফটিকছড়িতে যত্রতত্র করাতকল উজাড় হচ্ছে বন

ফটিকছড়িতে সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অবৈধ করাতকল। করাতকল স্থাপনে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ নির্দিষ্ট কিছু বিধিমালা মানার নির্দেশনা থাকলেও এসবের তোয়াক্কা নেই বেশির ভাগ করাতকলে। তবে নিয়ম মেনেই করাতকলগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। অধিকাংশ করাতকল পরিচালকরা বলছে বন বিভাগের লাইসেন্স আছে তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।
সূত্র জানায়, বেশিরভাগ সময় রাতে ট্রাক ও জিপযোগে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ আসে। মাঝেমধ্যে বন বিভাগ এসব কাঠ করাতকলে আসার সময় আটক করে। তবে বেশিরভাগ সময় কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই বনাঞ্চল থেকে কাঠ এসে অবৈধ করাতকলে চিরাই হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা কিছু অবৈধ করাতকলে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিলেও সপ্তাহখানেক পরে ফের চালু হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ৫টি রেঞ্জের ফটিকছড়ি উপজেলাধীন ১১টি বন বিটের ভেতরেই বেশিরভাগ করাতকল বসানো আছে। করাতকলের ৩০০-৪০০ গজ এলাকাজুড়ে সেগুন, গামারি, গর্জন, আকাশমনি, বেলজিয়াম, মেহগনি, কাঁঠালসহ ফলদ ও বনজ গাছের স্তূপ। একেকটি করাতকলে প্রায় ১০-১২ হাজার ঘনফুট পর্যন্ত কাঠ মজুত রয়েছে। রাত-দিন ইচ্ছেমতো চলছে কাঠ চিরাই। রাত হলে ট্রাক, পিকআপ ও জিপ গাড়ি ভরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয় এসব চিরাই কাঠ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মচারী জানান, করাতকলের লাইসেন্স না থাকলেও স্থানীয় বনবিট ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট পৌঁছে যায় মাসোহারা। নতুন করাতকল বসাতে হলে (বন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে খুশি করতে হয়। উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, বাস্তবে মোট কয়টি করাতকল আছে তার কোনো সঠিক হিসাব জানা নেই। তবে প্রতিদিনই বাড়ছে অবৈধ করাতকলের সংখ্যা। আমার জানামতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলেই রয়েছে দুই শতাধিক করাতকল। যার বেশিরভাগ চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সম্পূর্ণ ভেতরে গড়ে উঠেছে। একজন করাতকল মালিক জানান, বন বিভাগের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল বসানো যাবে না মর্মে গেজেটের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে উচ্চ আদালতে রিট মামলা করে এখনো চলছি। তবে তিনি এই মামলার সর্বশেষ কি অবস্থা এবং করাতকলগুলোর লাইসেন্স নবায়ন সর্বশেষ কখন হয়েছে তা জানাতে পারেননি। নারায়ণহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, আমার রেঞ্জের আওতায় করাতকল রয়েছে ৬৬টি। তারমধ্যে বৈধ ৫টি, বাকি সব অবৈধ। কিছু করাতকল মালিক উচ্চ আদালতে মামলা করে রেখেছে। বিভিন্ন সময় আমরা অভিযান চালাতে গেলে রিট মামলার দোহাই দিয়ে তারা পার পাওয়ার চেষ্টা করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অবৈধ করাতকল বন্ধে বন বিভাগ সহযোগিতা চাইলে আমরা করব। তবে গত এক বছরে তারা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা চায়নি।

×