ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:১১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

চৌগাছা হাসপাতালের আবাসিক ভবন খালি পড়ে আছে

শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশায় বিপাকে রোগীরা। এখানে আসা সোবাপ্রার্থীরা নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। পড়ছেন দালালের খপ্পরে। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে রোগ সারাতে হাসপাতালে এসে শরীরে নতুন রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। দেখার নেই কেউ। স্থানীয়রা বলছেন, মুন্সীগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ নির্লিপ্ত এখন।  হাসপাতাল চত্বরে হকার, ইজিবাইক পার্কিং ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্যে রোগীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। অপরদিকে হাসপাতালের জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার ষোলঘরে অবস্থিত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবস্থাপনায় চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরজুড়ে যত্রতত্রভাবে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে অসংখ্য ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ অন্য যানবাহন। এতে জরুরিভাবে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্য যান স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অপরদিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগের বাহিরে ও ভেতরে অর্ধশত রিপ্রেজেন্টেটিভকে ভিড় করতে দেখা গেছে। রোগীদের হাত থেকে ডাক্তাদের ব্যবস্থাপত্র এক প্রকার ছিনিয়ে নিচ্ছে তারা। একে একে মোবাইল ফোনে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে রোগীর সময় নষ্ট করছে। এতে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী রোগীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা। হাসপাতালে ঢুকতেই কমপ্লেক্সে চত্বরের পশ্চিম পাশে চোখে পড়বে চেয়ার টেবিল পেতে বসেছে চটপটি, ফুসকাসহ নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিভিন্ন দোকান পাট। চত্বরজুড়ে  যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা, পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে জমে আছে ময়লাযুক্ত নোংরা পানি। লক্ষ্য করা যায়, ডাক্তারদের চেম্বারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিপ্রেজেন্টেটিভরা রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেখার জন্য হুমড়ি খাচ্ছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী রোগী বলেন, রিপ্রেজেন্টেটিভদের উৎপাতে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বাহির হতেই আকস্মিক ব্যবস্থাপত্র টেনে নিয়ে ছবি তুলছে। বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকির অভাবে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। মো. নাহিদ নামে একজন বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গণটি এখন ইজিবাক, হকার ও রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে চলে গেছে। অটো চালকরা রোগী নিয়ে আসলেও দীর্ঘ সময় এখানেই পার্কিং করে রাখছে। সেবা নিতে আসা মো. জসিমউদ্দিন বলেন, হাসপাতালের বাইরে আবর্জনার কথা নাই বললাম কিন্তু কমপ্লেক্সের ভেতরে নোংরা ও দুর্গন্ধে ভরা টয়লেটের অবস্থা খুবই খারাপ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদিত পদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পদই শূন্য। জনবল সংকটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ এর আওতায় ১৪টি ইউনিয়ন ভিত্তিক পরিচালিত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকেও চিকিৎসাসেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাদের অভিযোগ কোনো তদারকি নেই এখানে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নম্বরবিহীন একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও প্রায় আড়াই বছর যাবত নষ্ট। অ্যাম্বুলেন্সটি অযত্নে আর অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। অথচ হাসপাতালের গাড়িচালক শাহ-জালাল নিজের কেনা অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।

গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে নতুন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যোগদান করেন। উপজেলাবাসীর দাবি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশার অবসানের পাশাপাশি হাসপাতাল সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্ব  দেবে কর্তৃপক্ষ। শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন হাসপাতালের নানামুখী সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এর একটি বড় সমস্যা এখানে জনবল সংকট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আধুনিক রূপে ফিরিয়ে আনতে ও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে’।     
চৌগাছায় আবাসিক ভবনে থাকেন না কেউ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, যশোরের চৌগাছা হাসপাতালের পুরাতন ছয়টি আবাসিক ভবন খালি পড়ে আছে। প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। তার ওপর আরও চারটি নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় কমপক্ষে আরও দশ কোটি টাকা।
নতুন পুরাতন  মিলে ১০টি ভবনে ফ্ল্যাট রয়েছে অন্তত ৬টি। বছরের পর বছর এ সব ফ্ল্যাট অব্যবহৃত থাকার কারণে আবর্জনায় ঢেকে গেছে। চিকিৎসক, নার্স, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার জন্য নির্মিত সব ভবনই খালি পড়ে আছে। পঞ্চাশ শয্যার হাসপাতালের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোতে কেউ না থাকলেও একশ’ শয্যার জন্য আবারও চারটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দশটি আবাসিক ভবনের অন্তত ৬৮টি ফ্ল্যাট খালি পড়ে থাকার ফলে সরকার প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে হাসপাতালে চিকিৎসক অবস্থান না করার কারণে দিনের ১৬ ঘণ্টা ও বন্ধের দিনগুলোতে উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষকে সেবা নিতে মাত্র একজন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করতে হয়। কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে জরুরি সেবা দেওয়ার মতো চিকিৎসক হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে এ হাসপাতালে কোনো মারাত্মক রোগী এলেই দ্রুত রেফার্ড করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অথচ হাসপাতালের আবাসিক ভবনে চিকিৎসক ও নার্সরা অবস্থান করলে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সহজ হতো। এসব কারণে কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চৌগাছা হাসপাতালের সুনাম দিনদিন কমে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসানুল মিজান সাংবাদিকদের বলেন, ডাক্তার ও নার্সদের সরকারি বাস ভবনে থাকতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, আর আমি সরকারি বাসভবনে না থাকলেও আমার বেতন থেকে বাসাভাড়া কেটে নেওয়া হয়।

×