ছবি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে স্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলিতে ইটভাঁটিতে মাটি সরবরাহ।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিন- রাত সমানে ফসলি জমির মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে অবৈধ সব ইটভাঁটিতে। কৃষি জমির এসব মাটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত শত শত অবৈধ স্টিয়ারিং ও ড্রাম ট্রাক যোগে প্রতিদিন সরবরাহ করা হয় ইটভাঁটি গুলোতে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে কৃষি জমি থেকে অবাঁধে মাটি উত্তোলন ও বিক্রয়ের রমরমা ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল। তিন ফসলি জমির টপ সয়েল বা মাটি কেটে ইটভাঁটিতে বিক্রয় করার ফলে একদিকে যেমন কমছে আবাদি জমির পরিমাণ, অপরদিকে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি, সেইসাথে বিনষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় কৃষি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ ২৬টি ইটভাঁটি । আর এ সব ইটভাঁটিতে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার ট্রলি বা ড্রাম ট্রাক ব্যবহার হচ্ছে মাটি সরবরাহের কাজে। কৃষি জমির মালিক বা কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে ট্রলি প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, স্টিয়ারিংয়ের ভাড়া ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা আর এসব মাটি ইটভাঁটিতে বিক্রয় করা হচ্ছে প্রতি ট্রলি ১০০০ হাজার থেকে ১২০০ টাকা করে। মাটি বিক্রয় চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে এক শ্রেণীর দালাল যারা প্রশাসন, কৃষক ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে অবাঁধে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন বা বছরের পর বছর ধরে। উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকার রবকুল, স্বরুপপুর এলাকার রানা, ঘোড়ামারা এলাকার সাদ্দামসহ অনেকেই রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে সকলকে ম্যানেজ করে এমন অবৈধ মাটি ব্যবসার কাজ চালিয়ে আসছেন।
উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও মাটি বিক্রেতা মো. মজনুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাগুনিয়া তেল পাম্প এলাকার রেফেজ মন্ডলের ছেলে মাটি ব্যবসায়ী রবকুলের কাছে তার নিজ ফসলি জমির ১০০ ট্রলি মাটি বিক্রয় করছেন ৪০ হাজার টাকায়। তিনি আরো বলেন, পুলিশ ও প্রশাসন ঝামেলা করলে সবকিছুই দেখবেন ওই মাটি ব্যবসায়ী রবকুল। মাটি ব্যবসায়ী রবকুল পুলিশকে ম্যানেজ করেই মূলত মাটি ব্যবসার কাজ করে আসছে দির্ঘদিন ধরে এমনটিও জানান তিনি।
মাটি ব্যবসায়ী রবকুলের সাথে কথা হলে তিনি মাটি ব্যবসার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মাটি কিনে বিভিন্ন ইটভাঁটিতে বিক্রয় করি। আমি ব্যতীত অনেকেই আছেন মাটির ব্যবসা করেন। তিনি আরো বলেন, কৃষি জমির মাটি কাটা অবৈধ জেনেই অনেকেই এ ব্যবসা করে থাকেন। এ ব্যাপরে আপনার কিছু চাওয়া থাকলে বলেন।
কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাঁটিতে সরবরাহের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দকী বলেন, অবৈধ মাটি উত্তোলন বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। মাটি উত্তলনের খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তবে মাটি কাটা বন্ধ ও বিক্রয়ের ঘটনায় মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দু’একজনকে অর্থদন্ড দিলেও বন্ধ হচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা ও মাটি ব্যবসায়ীদের ইটভাঁটিতে কৃষি জমির মাটি সরবরাহের অবৈধ কর্মকান্ড। তাই কৃষি জমি রক্ষায় ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।
সাজিদ