ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারে কাজী অফিস কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী প্রতারক চক্র গড়ে ওঠেছে। এ চক্রের মূল নায়কের চরিত্রে আছে খোদ কাজী অফিসের কাজীই। এ অবস্থায় প্রতারিত হচ্ছে সরলমনা নারী ও তাদের পরিবার। সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের একটি কাজী অফিসে ভুয়া বিয়ে পড়ানো নাটকের খবর প্রকাশ্যে আসার পর কাজী অফিসের প্রতি মানুষের ঘৃণা ও আতংক সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী এক নারী কাজী, প্রতারক স্বামী ও প্রতারক কাজী চক্রের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে। কক্সবাজার জেলা রেজিস্টার অফিস বলছে- তারা লিখিত অভিযোগ পেলে এ সব বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
সম্প্রতি কক্সবাজার সদর থানায় রেকর্ড হওয়া একটি মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে- কক্সবাজার পৌরসভা এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যঘোনা গ্রামের বাসিন্দা এক তরুণীর (সঙ্গতঃ কারণে নাম গোপন করা হলো) সঙ্গে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাহিত্যিকা পল্লী গ্রামের বাসিন্দা জনৈক নুরুল আলমের পুত্র মাহাথির মোহাম্মদ মাহিনের প্রেমের সম্পর্ক হয়। ভুক্তভোগী ওই নারী কক্সবাজারের একজন তারকা মানের ক্রীড়াব্যক্তি। তিনি দেশিয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হন।
গত ৮-৯ মাস আগে ক্রীড়া অনুরাগী পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় মাহাথির মোহাম্মদ মাহিন। এই যুবক নিজেকে হার্ডওয়্যার ব্যবাসায়ি পরিচয় দিয়ে চূড়ান্ত ভাবে বিয়ের আশ্বাসে এ নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে গত ১৮ অক্টোবর যুবক মাহাথির মোহাম্মদ মাহিন বিবাহের কথা বলে ওই নারীকে কক্সবাজার সদর থানাধীন ঝিলংজা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লিংক রোড এলাকার প্রধান সড়ক সংলগ্ন কাজী মাওলানা ক্বারী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর কাজী অফিসে নিয়ে যািয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই নারীকে যুবকের সঙ্গে বিয়ে পড়ানোর অভিনয় করে কাজী মাওলানা ক্বারী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও তার অফিসের স্টাফ হিসেবে কর্মরত সহযোগীরা। এ সময় একটি নীল রঙের কাগজে বিয়ে অনুষ্ঠানের কনে হিসেবে ওই নারীর নাম-ঠিকানা লিখে তাতে তার স্বাক্ষর নেন এবং রেজিস্ট্রিযুক্ত কাবিননামামূলে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান কাজী।
পরে কাজীর ভিজিটিং কার্ডের অপর প্রান্তে সীলমোহর আকারে কাবিননামার বালাম নম্বর- ০৩/২০২৪, পাতা নম্বর-৬০/২০২৪ ও সালের ক্রমিক নম্বর-১৮/১০/২০২৪ লিখে একটি টোকেন স্লিপ দেন। দুই মাস পর এ স্লিপ নিয়ে কাজী অফিসে এসে রেজিস্ট্রেট কাবিননামা কপি সংগ্রহ করতে বলেন। এ সময় যুবক মাহাথির মোহাম্মদ মাহিন উভয় পক্ষের লোকজনের সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তার ঘরে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেয়।
এ ঘটনার পর ওই নারীকে স্ত্রী পরিচয়ে কক্সবাজার শহরতলীর কলাতলী এলাকায় বিভিন্ন আবাসিক হোটেল কক্ষে নিয়ে গিয়ে ও তার আত্মীয় এবং পরিচিত লোকজনের বাসা-বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রতারণামূলক ভাবে স্ত্রী হিসেবে সম্মতি আদায় করে তাকে দিনের পর দিন সহবাস করে আসে। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে কক্সবাজার পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন বৈদ্যঘোনা এলাকার নুর টাওয়ারের সামনে জনৈক কানিজ ফাতের বাড়িতে নিয়ে তাকে ওই বাড়ির লোকজনের কাছে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। ওখানেও একাধিকবার সহবাস করে রাত ৯টার দিকে চলে আসে।
এক পর্যায়ে ওই নারী জানতে পারে মাহাথির মোহাম্মদ মাহিন একজন প্রতারক এবং বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত। এ বিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে ওই নারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এক পর্যায়ে তাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করে। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে ওই নারীর মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তিনি কাজী অফিসে গিয়ে কাজী মাওলানা ক্বারি মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর দেওয়া টোকেনের অনুকূলে কাবিননামার কপি চান। এ সময় কাজী এ ধরণের কোনো বিয়ে সম্পন্ন হয়নি বা এমন রেজিস্ট্রিযুক্ত কাবিননামার কপি তার কাছে নাই এবং তাদের বিবাহ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রই তার কাছে সংরক্ষিত নাই বলে জবাব দেন। পরে দেখা যায় এ কাজী অফিসের বালামে টোকেনে উল্লেখিত ক্রমিকে বিভিন্ন দম্পতির বিবাহ রেজিস্টারের নমুনা।
প্রতারণার শিকার ওই নারী জানান, এই কাজী অফিস কেন্দ্রিক সহকারী কাজীসহ একটি প্রতারক সিন্ডিকেট বড় ধরণের জালিয়াতির মাধ্যমে এই ভুয়া বিয়ে রেজিস্টারের নাটক সাজিয়ে তার সর্বনাশ করেছে, এ নিয়ে তিনি চক্রের সকল সদস্যে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
এ নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় সাহিত্যিকা পল্লী গ্রামের বাসিন্দা জনৈক নুরুল আলমের পুত্র মাহাথির মোহাম্মদ মাহিন ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প চৌধুরি পাড়ার বাসিন্দা কাজী মাওলানা ক্বারি মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও তার ভাই অফিস সহকারী শহিদ উল্লাহ এবং দক্ষিণ ডিককুল এলাকার বাসিন্দা ছৈয়দ আলম।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে কাজীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো সদুত্তর দিতে পরেননি। কখনো খোঁজ নিতে হবে, কখনওবা অন্য অফিসে ফাইল আছে বললেও এমন কোনো বিয়ের তথ্য তাদের কাছে নেই বলে জানান। বিষয়টি কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রারকে অবহিত করা হলে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
শিহাব