ছবি : জনকণ্ঠ
ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী মৃত আমিন শেখ ও পপি খাতুন দম্পতির তিন শিশু সন্তান আইরিন(১০), আহমাদুল্লাহ (৫) ও জানাতুন নাঈমা (৪)। নাবলক এতিম তিন শিশু বাবার ঋণের দায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের দায়ের করা অর্থ ঋণের মামলার আসামী। মা পপি খাতুন জেলে যাওয়ার পর থেকেই একই মামলার আসামি তিনটি এতিম শিশু সারাক্ষণ শঙ্কা ও আতংকের মধ্যে রয়েছে, কখন জানি তাদেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে পৌরসদরের অডিটোরিয়াম এলাকায় এ বিষয়ে এক সংবাদ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এলাকাবাসী ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে, স্বামী আমিন শেখের নেওয়া ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পপি খাতুন বর্তমানে কারাগারে। বাবা নেই, মা কারাগারে। এতিম তিনটি শিশুর জীবন এখন বিষাদে ভরা, যন্ত্রণা কাতর। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মা পপি খাতুন জেলে যাবার পর তাদের নানা উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বান্দুগ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখ বাড়িতে আশ্রয়ে রয়েছেন অবুঝ শিশুরা। দিনমজুর নানা সিরাজ শেখের নিজের সংসারই ঠিকমতো চলে না তার উপর যুক্ত হয়েছে এতিম নাবালক তিন নাতি-নাতনি। দিশেহারা নানা তাই এতিম শিশুদের নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের নানা সিরাজ শেখ বলেন, আমার মেয়ের জামাই আমিন শেখ বোয়ালমারী বাজারের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর জানতে পারি তিনি ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বোয়ালমারী শাখা থেকে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেন।
পপি খাতুনের আত্মীয় হুমায়ুন কবির জনকণ্ঠকে বলেন, অসহায় এতিম তিনটি শিশু, যারা এখনো ঠিকমতো টাকা, ঋণ, লেনদেনের অর্থই বোঝে না। বয়স লুকিয়ে তাদেরও করা হয়েছে আসামী। এরা নাকি জামিনদার হয়েছিলো। এরা ঋণের কী বুঝে। আদালতের নিকট আবেদন মৃত ঋণ গ্রহীতার অসহায় ওয়ারিশদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ঋণ মওকুফ করে তাদেরকে বেকসুর খালাস দেওয়া হোক। তাদের জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই।
জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক, রাসেল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঋণ গ্রহীতা মৃত আমিন শেখ ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ নেন। ব্যাংকের শর্ত ও নিয়মের মধ্যে থেকেই চলমান ব্যবসার অনুকূলে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলী মেনেই ঋণের টাকা অনাদায়ে জামিনদার ও ওয়ারিশগণের নামে মামলা হয়েছে। এতিম নাবালক শিশুদের নামে মামলার বিষয়ে আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মেহেদী হাসান বলেন, ঋন গ্রহীতা আমিন শেখের অবুঝ শিশুদের এ মামলায় ওয়ারিশ সূত্রে আসামী করা ঠিক হয়নি। তারা ওয়ারিশ হলেও প্রাপ্ত বয়সের আগে তারা বাবার সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। শিশুদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিঃসন্দেহে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননার শামিল বলেও তিনি জানান।
এন কে বি নয়ন/মো. মহিউদ্দিন