ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

যেভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন হাসিনার প্রটোকল অফিসার এমপি নাসিম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১২:৫৭, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

যেভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন হাসিনার প্রটোকল অফিসার এমপি নাসিম

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তাকে রানৈতিক ব্যানারে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো ফেনীর অবিভাবক হিসেবে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান নাসিম। ২০০১ সালে হাসিনা বিরোধী দল হলেও তার প্রটোকল অফিসার ছিলেন নাসিম। আর এই অফিসার পদটাই তার জীবনে আলাদিনের চেরাগ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এক সময়ে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ব্যবসা ও রাজনীতিতে মন দেন তিনি। প্রশাসনের বদলি, পদায়ন থেকে শুরু বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানীর লাইসেন্স করে দেওয়া কাজ করে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। 

শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসারের এর বাইরে শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন নাসিম। শেখ রেহানার অবৈধ টাকার সংগ্রাহকও বলা হতো নাসিমকে। আর এই অবৈধ টাকার জোরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগিয়ে নেন ফেনী-১ আসনের নমিনেশন। মির্জা আজম, বাহাউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাসিরকে নিয়ে তৈরি করেছিলেন অবৈধ অর্থ উপার্জনের সিন্ডিকেট। হাসিনা সরকারের আমলে যেসব খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। এর নেতৃত্বে যিনি ছিলেন তিনি সব সময়ই থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিমাসে ব্যাংকে এসএস পাওয়ার থেকে মোটা অংকের চেক নাসিমের এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ডা. জাহানারা আরজু এর নামে জমা হতো। এমন একটি চেকের কপির সন্ধান মিলেছে।

বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকেই ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে যেতেন আলাউদ্দিন নাসিম। শেখ হাসিনার ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন বহাল তবিয়তে। বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী এই সাবেক এমপিকে ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প বাগিয়ে নেন এক আলোচিত ব্যবসায়ী। তাকে সামনে রেখেই চালানো হয় লুটপাট।

জুলাই-আগস্টে বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফেনীর মহিপালে তার নির্দেশে গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। তবুও দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন নেই তার বিরুদ্ধে। মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে অনেকের নামে মামলা হলেও এখনও সেখানে আলাউদ্দিন নাসিমের নামে কোনো মামলা হয়নি। হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে দেশের বাইরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করলেও তার বিরুদ্ধে এখনও মামলা হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে)।

এদিকে, ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র করে চলছে ফ্যাসিস্ট মাদক সম্রাট আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। অবৈধভাবে ভারতের কলকাতা পালিয়ে পতিত হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন নাসিম। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভারতের ভূইফোড় মিডিয়ার গুজব প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সামনে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছেন তিনি। আলাউদ্দিন নাসিমের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের গুজব সেল। কারণ, হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার আলাউদ্দিন নাসিম। দুই বোনের চোরাই টাকা তার জিম্মায় রয়েছে। আর সেই অর্থ ব্যয় করছে ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ করার মিশনে। 

অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ফেনীর সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন,     ‘আমরা ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছি। তার অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছি। আমরা তার বিষয়ে সার্বিকভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।’

সূত্র:  https://youtu.be/Lh1oUzYfhMc?si=ZT-0iiY9XpJgwDIV এবং https://youtu.be/ZfxmnCznJCw?si=fVOuevZoUz8C-9_S

এম হাসান

আরো পড়ুন  

×