রাজশাহী অঞ্চলের আমবাগানগুলোতে এখন গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে মুকুল
মাঘের শীতের মধ্যেই আমের মুকুল সুবাস ছড়াচ্ছে এখন রাজশাহী অঞ্চলে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রাজশাহীর আমগাছগুলো আগে-ভাগেই মুকুলে ছেয়ে গেছে। চাষিরা তাই আগাম পরিচর্যাও শুরু করেছেন। পোকামাকড় থেকে এসব গাছের মুকুল বাঁচাতে বালাইনাশক দিচ্ছেন।
আমের ভালো ফলন আশা করছেন চাষিরা। এজন্য গাছের যতেœ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বেশ কয়েক দিনের ঘন কুয়াশায় মুকুল নষ্টের শঙ্কাও রয়েছে তাদের। যদিও মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম বলে কৃষকদের আশস্ত করছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহীর আম চাষিরা বলছেন, গত বছর জেলার গাছগুলোতে মুকুল কম এসেছিল। এবার আগে-ভাগেই বেশি মুকুল আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মুকুল। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কুয়াশার পর রোদ থাকায় নষ্টের পরিবর্তে মুকুল আরও সতেজ হবে। এজন্য কিছু কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চাষিদের।
সরেজমিনে জেলার চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া এলাকার কয়েকটি আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানগুলোর অধিকাংশ গাছে মুকুল এসেছে। যেসব গাছে এখনো আসেনি, সেগুলোর বাড়তি যতœ নিচ্ছেন চাষিরা। তবে আশঙ্কার কথা জানিয়ে চাষিরা বলছেন, আগাম মুকুল আসলে কুয়াশার কবলে পড়ার শঙ্কা বেশি থাকে। ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে মুকুলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। এতে মুকুল ঝরে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে ফলনে। এজন্য কীটনাশক ব্যবহার করছেন কেউ কেউ।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। গত বছর এই অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরের বুধপাড়া, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার আমের বাগানগুলোতে আগাম মুকুল এসেছে। এর মধ্যে বুধপাড়া, চারঘাটের নিমপাড়া, ভায়ালক্ষ্মীপুর, চারঘাট সদর, সারদা, শলুয়া এবং বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম, বাউসা, গড়গড়িয়া ইউনিয়নের অনেকের বাগানে মুকুল এসেছে বলে জানান চাষিরা।
জেলার চারঘাটের চাষি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো। তেমন শীত নেই, তুলনামূলক কুয়াশাও কম। অনেক সময় কুয়াশার কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়। কিন্তু এ বছর সেই ঝুঁকি কম। তাই আশা করছি, গাছে ভালো মুকুল আসবে।
সাত বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামের বাহাদুর রহমানের। তিনি বলেন, গত দুই বছর বাগানে মুকুল আসেনি। ফলে অনেক গাছ কেটে ফেলেছি। এখন যেসব গাছ আছে সেগুলোতে আগে-ভাগেই মুকুল এসেছে। কুয়াশায় মুকুল নষ্ট না হলে এবার আমের ভালো ফলন হবে।
রাজশাহীর পবার চাষি সাবিয়ার আলী বলেন, গত দুই বছর গাছে তেমন মুকুল আসেনি। এবার দেখছি আগে-ভাগেই এসেছে। এতে খুশি হয়েছি। তবে শঙ্কাও আছে, কারণ কুয়াশার কবলে পড়লে মুকুল নষ্ট হয়।
রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর ভালো মুকুল এলেও তা ঝরে পড়ায় উৎপাদন কমেছিল। এবার ভালো ফলনের আশা করছি। বাকিটা আবহাওয়ার ওপরে নির্ভর করবে। কিছুদিনের মধ্যে বাগান কেনাবেচা শুরু হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর যেহেতু কম মুকুল এসেছিল, এবার বেশি আসা স্বাভাবিক। আর চাষিরা গাছের প্রতি যতœশীল হলে ঝরে পড়ার শঙ্কা কম।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোতালেব হোসেন বলেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী কোনো বছর মুকুল কম আসলে পরের বছর বেশি আসে। সে হিসাবে এবার বেশি আসার কথা। এবারের আবহাওয়া আমের জন্য খুবই উপযোগী। আশা করছি, মুকুল-গুটি ও উৎপাদন ভালো হবে।