ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

দিনাজপুরে কর্মী সম্মেলনে জামায়াত আমির

৫৩ বছরের সব খুনের বিচার না হলে হত্যার সংস্কৃতি বন্ধ হবে না

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

৫৩ বছরের সব খুনের বিচার না হলে হত্যার সংস্কৃতি বন্ধ হবে না

জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে শনিবার দিনাজপুর বড় মাঠে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘৫৩ বছরের সব খুনের বিচার হতে হবে। বিচার না হলে হত্যার সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। লুটপাটের বিচার না হলে লুটপাটের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। ঘুষখোরের বিচার না হলে ঘুষখোরের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। আমরা একটা শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আপনারা তো অনেক সংস্কার হাতে নিয়েছেন।

তাহলে বিগত সময়ে যারা মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন করেছে, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ মানুষকে বিচারের নামে খুন করেছে, তাদের কালো তালিকা প্রকাশ করুন। আমরা সব অন্যায়ের বিচার দাবি করেছি। সব হত্যার বিচার করতে হবে।’ শনিবার বেলা ১১টার দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দান (বড় মাঠে) জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছ, তোমাদের অবদানের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ এবং শ্রদ্ধা করি। তোমরা আমাদের গর্ব, আগামীর বাংলাদেশ তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘যারা কথায় কথায় আমাদেরকে অন্যদেশে চলে যান বলত, তারাই এখন দেশের বাইরে। দেশ থেকে জুলুমকারী বিদায় হয়েছে, কিন্তু জুলুম বন্ধ হয়নি। তরুণ সমাজকে সব সময় আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা হতো। এখন তরুণ সমাজ বুঝতে পেরেছে, তাদেরকে ভুল বোঝান হতো।’
তিনি বলেন, ‘শুধু জায়ায়াত নয়, যারাই দেশ প্রেমিক ছিল, তাদের সবার প্রতি নেমে এসেছিল জুলুম। পুরো দেশটাকে তারা কারাগার বানিয়েছিল। তারা বলত গণতন্ত্রের দরকার নেই। দেশে উন্নয়ন হলেই চলবে। কিন্তু তারা উন্নয়নের নামে রডের পরিবর্তে বাঁশ এবং সিমেন্টের পরিবর্তে ছাই উপহার দিয়েছে। তারা দেশের মানুষের শান্তিতে থাকতে দেয়নি। দেশের ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তারা জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম করেছে।

তাদের অত্যাচর-নির্যাতনের কারণে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেনি। গত সাড়ে ১৫ বছর আমরা শান্তিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘এই দেশকে আমরা সবাই ভালোবাসি। তবে একটি দল ক্ষমতায় এসে মনে করেছিল, তারাই একমাত্র স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ভালোবাসে, আর কেউ ভালোবাসে না। মানুষের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলায়, অন্যরা তা চুরি করে বিদেশে পাচার করে।’ 
জামায়াত আমির বলেন, ‘তারা বলে, শাপলা চত্বরে কোনো আলেমকে হত্যা করা হয়নি। সেখানে নাকি আলেমরা রং ছিটিয়ে দিয়েছে। কতটা নির্লজ্জ হলে একজন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলতে পারেন। আমরা আফ্রিকার জঙ্গল থেকে আসিনি। তারা মনে করেছিল, জামায়াতের কর্মীদের গুম খুন করে জেলে পুরে মাটির নিচে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু আজ তারা কই। তারা দেশের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাঁধা দিয়েছে। তারা নিজেরাও কিছু করেনি। আমাদেরকেও করার সুযোগ দেয়নি।’
দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহ সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, মাহাবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য দেলোয়ার হোসেন জেলা জামায়াতের শূরা সদস্য ও উপজেলা আমির মো. আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

×