ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে মারা গেছে দুই হাজার মুরগির বাচ্চা

উত্তর জনপদে কিছু সময় নিরুত্তাপ সূর্যের দেখা কমেনি শীত

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

উত্তর জনপদে কিছু সময় নিরুত্তাপ সূর্যের দেখা কমেনি শীত

উত্তর জনপদে কিছু সময় নিরুত্তাপ সূর্যের দেখা

উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও সূর্যের দেখা মিললেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা আবার হারিয়ে যায়। নীলফামারীতে সূর্যের দেখা পেয়ে বোরো আবাদে কৃষকরা ঝাঁপিয়ে পড়েন ফসলের মাঠে। তবে, নিরুত্তাপ সূর্য ডোবার পর শুরু হয় শীতের তীব্রতা। নওগাঁয় ছয়দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। কুড়িগ্রামে শতাধিক খামারে দুই হাজার মুরগির বাচ্চা ঠান্ডায় মারা গেছে। নাটোরে শীত আর কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
নীলফামারীতে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু জনজীবন। মাঘের কনকনে শীত সহজেই কাবু করে ফেলছে এই অঞ্চলের মানুষকে। ভোর থেকে শুরু হয় ঘন কুয়াশা। উষ্ণতার আশায় কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করেন। কেউ ভিড় জমান চায়ের দোকানে। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন দিনের বেলাতেও চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তবে পাঁচদিন পর শনিবার বেলা ১২টার দিকে মেঘ কেটে সূর্য উঁকি দিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য।

সেচনির্ভর বোরো আবাদে কৃষকরা ঝাঁপিয়ে পড়েন ফসলের মাঠে। তিন ঘণ্টা না যেতেই ঝলমলে রোদের কিরণ ম্লান হয়ে পড়ে। বিকেল থেকে ফের শুরু হয় কনকনে শীত। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার সকালে তাপমাত্রা আরও কমে আসে। সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পারদের কাটা ছিল কাছাকাছি। ফলে, পাঁচদিন পরও দিনের তাপমাত্রা আরও কমেছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শনিবার থেকে জলীয় বা®েপর আধিক্য কিছুটা কমতে পারে এবং দিনের অবস্থা ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুই থেকে তিনদিন রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা দিনাজপুরে ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নীলফামারীর ডিমলায় সর্বনি¤œ ১২  ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৬.২ ডিগ্রি, বিভাগীয় শহর রংপুরে সর্বনি¤œ ১১.৪ ও সর্বোচ্চ ১৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নীলফামারীর  সৈয়দপুরে সর্বনি¤œ ১০.৬  ও সর্বোচ্চ ১৮.৪, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ ৯.৭ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ১৫, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনি¤œ ১১.৪ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ১৬.৫ ডিগ্রি  সেলসিয়াস। 
শহরাঞ্চলের চেয়ে শীতের তীব্রতা গ্রামাঞ্চলে ও নদীর চরাঞ্চলে অনেক বেশি অনুভূত হয় বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র মানুষ। শীতজনিত রোগবালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া আর কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। 
কুড়িগ্রাম ॥ শীত ও কনকনে ঠান্ডায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কুড়িগ্রামে। ছয়দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই এ অঞ্চলে। হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে ঠান্ডার মাত্রা। রাতজুড়ে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। পাশাপাশি গবাদিপশু পড়েছে চরম দুর্ভোগে। জেলায় শতাধিক খামারে প্রায় দুই হাজার মুরগির বাচ্চা ঠান্ডায় মারা গেছে। খামারিরা বাচ্চা বাঁচানোর জন্য দিন-রাত লাইট জ¦ালিয়ে রাখছেন। 
জেলায় ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। ৪০৫টি চর-দ্বীপচরে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষের বসবাস। এসব মানুষের অধিকাংশই শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছে শত শত মানুষ। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দু-একদিনের মধ্যে শীত কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। 
নওগাঁ ॥ চারদিন পর নওগাঁয় শনিবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলেছে। নিরুত্তাপ সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেঁকে বসে কনকনে শীত। চলতি শীত মৌসুমে নওগাঁ ও তার আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শীতের দাপট। কখনো মৃদু শৈতপ্রবাহ, কখনো তীব্র শৈতপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের সেই তীব্রতাকে বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। 
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। শনিবার সকাল ৯টায় নওগাঁর সর্বনিম্ম তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ১০.৮ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসের বাকি দিনগুলো শীতের এমন তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

শীতের তীব্রতায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকার শীতার্ত অসহায়, দুস্থ, ছিন্নমূল, ভবঘুরে ও খেটে খাওয়া শ্রেণির নি¤œ আয়ের মানুষ। এ ছাড়া, বিভিন্ন শিশুসদন-এতিমখানার শিক্ষার্থী, হরিজন ও বেদে পল্লীর বাসিন্দারা শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন। 
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল নিজে শিশুসদন-এতিমখানায় গিয়ে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিচ্ছেন। এ ছাড়া, তিনি হরিজন পল্লী, বেদে পল্লী, হিজড়া সম্প্রদায় এবং শ্রমজীবীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন। জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীতার্ত শিক্ষার্থীদের মাঝেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।    
জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল জানান, প্রতিবছরই শীতের তীব্রতায় জবুথবু অবস্থায় থাকে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর মানুষ। চলতি শীত মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকার দুস্থ, অসহায়, ছিন্নমূল, ভবঘুরে, হিজড়া, শ্রমজীবী মানুষসহ শিশুসদন-এতিমখানা, হরিজন ও বেদে পল্লীর শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজারের অধিক শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া, জেলার ১১টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভার জন্য ৬৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে যে অর্থ দিয়ে নিজ নিজ উপজেলার নির্বাহী অফিসাররা শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল ক্রয় করে শীতার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া, মন্ত্রণালয় বরাবর আরও চাহিদা পাঠানো হয়েছে। 
লালপুর, নাটোর ॥ প্রচ- শীত আর ঘন কুয়াশায় উপজেলায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নি¤œআয়ের মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। সরকারিভাবে শীতবস্ত্র পেয়েছে প্রায় ৭ হাজার শীতার্ত মানুষ। এ ছাড়া, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অসহায় ও শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। 
মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী তিলকপুর গ্রামের বৃদ্ধ নুরজাহান বেগম বলেন, খুব ঠান্ডা লাগছে। বাওড়া পূর্বপাড়া গ্রামের মহিষের গাড়ির গারোয়ান বাচ্চু বলেন, সুগার মিলে ভোরে আখ বোঝাই গাড়ি নেওয়ার সময় ঘন কুয়াশা আর শীতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। 
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাহাবুদ্দিন বলেন, শীতজনিত কারণে শ^াসকষ্ট ও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে গেছে। 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী হাসান বলেন, শীতে সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের। তিনি জানান, সরকার থেকে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে প্রায় ৭ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

×