ধলেশ্বরীর শাখা নদীর ওপর মোল্লারচর সেতু না হওয়ায় বাঁশের পুলই একমাত্র অবলম্বন
আলোর নিচে অন্ধকার। মাত্র ১০০ মিটার সেতুর অভাবে জেলা শহর মুন্সীগঞ্জের একটি বড় অংশ বিচ্ছিন্ন। এতে কয়েক হাজার মানুষ ন্যূনতম পৌর সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। কর্তৃপক্ষ বলছে সেতু নির্মাণ করে এলাকাটি মূল শহরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোরের কুশায়ার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের পুল দিয়ে পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ। পারাপার চলে রাত অবধি। এমনকি উৎপাদিত পণ্য নিয়েও নড়বড়ে এই পুল ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে স্থানীয়রা। পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লারচরের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন এই কাঠ-বাঁশের পুল। মাঝখানের অংশটি খোলা রাখা হয়েছে উঁচু নৌযান আসতেই খুলে দিতে হয়।
ধলেশ্বরীর শাখা কালিদাস নদী মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, শুধু সেতুর অভাবে জনপদটিই এখন অবহেলিত। দেখে বোঝার উপায় নেই প্রথম শ্রেণির পৌরসভার অংশ এটি। পানি ও গ্যাস সংযোগ নেই। অভ্যন্তরীণ সড়কেরও দুরবস্থা। পৌর কর দিয়েও নিত্যদিনের বিড়ম্বনায় মানুষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে সেতু নির্মাণ করে এলাকাটি মূল শহরের সাথে যুক্ত করা হবে।
মোল্লারচরের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে আমাদের এই কাঠের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। অসুস্থ হলে রোগী নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। অনেক ঘুরে শহরে যেতে হয়। ঘুরে যাওয়ার রাস্তাঘাটও ভালো নয়। সড়কেরও বেহাল দশা।’
ইব্রাহিম খান নামের অপর বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন সময় আমাদের অনেক জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্রিজ করার জন্য। আমরা আশ্বাস পাইছি কাজের কাজ কিছুই হয় নাই। এই ব্রিজটি আমাদের অতি জরুরি। ব্রিজটির কারণে আমরা অবহেলিত। এই এলাকার অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা জেলা শহরে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে। কৃষিপণ্য বাধ্য হয়ে সাঁকো দিয়ে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, এলাকাবাসী ব্রিজটি করার জন্য আবেদন করেছে। আমরা সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করে দেখেছি, ব্রিজটা একটু বড়। প্রায় ১০০ মিটারের কাছাকাছি। এটা আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখেছি যাতে বাস্তবায়ন হয়। আশা করি ভবিষ্যতে এটা বাস্তবায়ন হবে।
মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৌসুমী মাহবুব বলেন, ‘পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মোল্লারচরে যে জায়গাটা এখানে ১০০ মিটার ব্রিজের প্রয়োজন। পৌরসভার ক্যাপাসিটি কতটুকু আছে ইতোমধ্যে আমি কথা বলেছি। সে ক্ষেত্রে আমরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সহযোগিতা নিবো। এই ব্রিজটি আমাদের করতে হবে। যেহেতু ওই জায়গাটা পৌরসভার সাথে বিচ্ছিন্ন আমরা চেষ্টা করবো ব্রিজটা যাতে খুব দ্রুতই করা যায়।’
২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাঁশ-কাঠে তৈরি এই সেতু কয়েক দফা ভেঙে পরলে দেওয়া হয় জোড়াতালি। আলোর নিচে যেন অন্ধকার। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতু না হওয়ার কারণে মানুষের দুর্ভোগ লেগেই আছে। বাঁশ-কাঠের সেতু দিয়ে চলতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে।