ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

নাম মাত্র ফি দিয়ে এখানে শুধু ভর্তি হতে হয়

শিক্ষিত বেকারদের স্বাবলম্বী করছে মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

শিক্ষিত বেকারদের স্বাবলম্বী করছে মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট

.

জেলার ইসলামপুরে এক সময় ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি ছিল একেবারেই অচেনা। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারদের আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ২০২৪ সাল থেকে ইসলামপুর পৌরশহরের হাসপাতাল সড়ক এলাকায় শুরু হয় মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠনাটি হওয়ায় গোটা উপজেলার সব হিসাব যেন বদলে গেছে। মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট ইসলামপুরের মানুষের জন্য শুধু একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নয় বরং এটি ইসলামপুরের যুবক-যুবতীদের জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। হয়ে উঠেছে আবেগ ও অনুভূতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা জি টেক গ্রুপের চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী মোস্তফা আল মাহমুদ। তার সুদূর প্রসারী চিন্তা এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নে গড়ে ওঠা এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ইসলামপুরের যুবক-যুবতীদের ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল দক্ষতায় পারদর্শী করে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। নাম মাত্র ফি দিয়ে এখানে শুধু ভর্তি হতে হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের একদম ফ্রিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ইসলামপুরের মাটি ও মানুষের আস্থার প্রতীক মোস্তফা আল মাহমুদের স্বপ্ন তার অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এলাকার যুবক-যুবতীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ করে দেওয়া। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তাদের মিশন ও ভিশন সম্পর্কে ছিল দৃঢভাবে অটুট। ইনস্টিটিউটটির মিশন ইসলামপুরের যুবকদের বিশ্বমানের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী ও আর্থিকভাবে স্বাধীন করা আর ভিশন হল আগামী দিনে দেশ ও দেশের বাইরে বিশ্ব বাজারে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ইসলামপুরের শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে তারা ফ্রিল্যান্সিং শিখে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক কাজ করতে পারবে।  আমি বিশ্বাস করি, যত বেশি মানুষকে আমরা স্বাবলম্বী করতে পারব। তত বেশি আমাদের সমাজের উন্নতি হবে, সমাজ উন্নতি হলে সর্বোপরি দেশ উন্নত হবে। তবেই বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ হবে। প্রতিষ্ঠানটি শুধু যে স্বপ্ন দেখতে বিশ্বাসী না নয় বরং তা বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। ইতোমধ্যে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববাজারে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সফলতার বাস্তবিক নজির দেখে। রাশেদ ও হোসনেয়ারা বেগমের মতো অনেক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং করে বর্তমানে নিজেদের জীবনমান উন্নত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসাবে দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. আলমগীর কবিরে কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন। কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপের মাধ্যমে শূন্য থেকে একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ ও ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে টপরেটেড ট্রেইনার দ্বারা প্রশিক্ষণ দিয়ে ফিল্যান্সার হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এই কোর্স শেষ করে প্রকৃত ক্লায়েন্টদের প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা বর্তমানে মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউটে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ওয়েব ডিজাইন নিয়ে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে অভিভাবক এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। ইসলামপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউটকে নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য বিশ্বমানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মনে করছেন। তারা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদের প্রতি অগাধ আস্থা রেখেছেন। ইনস্টিটিউটটি আগামী দিনে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামও চালু করার পরিকল্পনা করছে মোস্তফা ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে এখানে প্রশিক্ষিত তরুণদের জন্য একটি আইটি পার্ক গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা। তিনি বিশ্বাস করেন একসময় এই ছেলে মেয়েরা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির আবিষ্কার করবে ইসলামপুরের মাটিতে। একসময় হাইটেক পার্ক এবং আইটি পার্কের মত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে যমুনা বিধৌত ইসলামপুর উপজেলায়।
প্রতিষ্ঠানটি চারটি ধাপে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রথম ধাপে যে সকল প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হয় তারা লেভেল-০ তে অবস্থান করে ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের বেসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। এরপর লেভেল-১ যেখানে প্রশিক্ষণার্থীর পছন্দ অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিংয়ের একটি কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। সফলভাবে প্রশিক্ষণের একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে তারা লেভেলআপ হয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ইনকাম শুরু করে যেটি লেভেল-২ হিসেবে পরিচিত করা হয়। লেভেল-২ সফলভাবে সম্পন্নকারীদের ইন্টারনীর মাধ্যমে লেভেল-৩ এ উন্নীত করা হয় যার মাধ্যমে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মোট সময় লাগে এক বছর। এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটি তিনটি ব্যাচে ৫৬০ জনকে ফ্রিল্যান্সিং বেসিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের দুটিটি ব্যাচে ভর্তি হয়েছে প্রায় ২০০ জন। এদের মধ্যে লেভেল-২ চলাকালীন সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছেলেমেয়ে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। অনেকেই মার্কেট প্লেসেও কাজ পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এর সংখ্যাও আনুপাতিক হারে বাড়ছে।

×