হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। দল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না হলেও বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাজ করছেন নির্বাচন নিয়ে। বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্থানীয় নেতারা।
নাটোর-৪ আসনটি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা ও বড়াইগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে জাতীয় পার্টি জয়ী হয় ২বার, বিএনপি ২বার এবং আওয়ামী লীগ ৭বার। আওয়ামী লীগ কোনো ভাবে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে এই আসনে বিএনপি বা জামায়াতের জন্য জয়ী হওয়া কঠিন হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ভোটের হিসাব নিকাশে জামায়াত আশাবাদী।
জামায়াতে ইসলামী এখন পর্যন্ত সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্ভর করছে নির্বাচনে জোট নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে ৫ আগস্টের পর জেলা জামায়াত আমীরের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়াতে দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে নাটোর জেলা জামায়াত। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে নাটোর জেলার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে অন্য দলের জন্য ছেড়ে দিতে পারে আসনটি।
অভিযোগ রয়েছে নাটোরে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন জেলা আমির ড. মীর নুরুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনে তিনি জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল হাকিমকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অপরদিকে গুরুদাসপুর উপজেলার সাবেক আমির আব্দুল খালেক মোল্লা এবং জেলা নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন কাজ করছেন প্রার্থী হিসেবে। এ নিয়ে জেলার নেতাকর্মীদের মেধ্যে তৈরি হয়েছে বিভক্তি।
স্থানীয়রা বলছেন আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় গুরুদাসপুর উপজেলার আমির খালেক মোল্লাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণার আগেই আব্দুল হাকিম জেলার বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ফেস্টুন লাগানোয় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। তারা বলছেন জামায়াতের কেউ পোস্টারের রাজনীতি করে না। জাময়াতের শৃঙ্খলা ভঙ্গে করে এমন কাজ চলছে। এ বিষয়গুলো জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অভিযোগ করার পরই থানা আমিরের পদ থেকে সরে যেতে হয় খালেককে। চাপা ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ্য সমালোচনা করার সুযোগ না থাকায় নেতাকর্মীরা অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, বহিষ্কৃত অনেক নেতাদেরকে দিয়েই চলছে গুরুদাসপুর উপজেলা জামায়াতের কার্যক্রম। দুই বছরে লালপুর উপজেলায় দুজন সেক্রেটারি পরিবর্তন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মপরিষদ সদস্য অভিযোগ করে জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় এ পর্যন্ত আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে তিনবার তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় জামায়াত। তবে অদৃশ্য কারণে কোনোবারেই তাকে বহিষ্কার বা সাংগঠনিক কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
তথ্য বলছে, জামায়াতের নাটোর জেলার প্রায় সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আসামি থেকে বাদ যায়নি দলটির সমর্থকরাও। এমনকি অনেকে মাসের পর মাস জেল খেটেছেন। অনেকে আবার সহায়-সম্পদ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু দলটির জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতা আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তাই অনেকে বলছেন আব্দুল হাকিম আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি কোনো।
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে গুরুদাসপুর উপজেলা আমির আব্দুল খালেক মোল্লাকে সরিয়ে এর মধ্যে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল আলিমকে আবার দলে এনে উপজেলা আমির বানানো হয়েছে। এছাড়া সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় জামায়াতকে লিখিত অভিযোগ করেন গুরুদাসপুর উপজেলা সাবেক আমির মো. আব্দুল খালেক মোল্লা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মো. আব্দুল খালেক মোল্লাকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়- এমন অভিযোগ করেছেন জামায়াতের কর্মীরা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে নাটোর জেলা জামায়াত নেতা ও নাটোর ৪ আসনের (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) প্রার্থী আব্দুল হাকিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত নেতা আব্দুল হাকিম প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস বলছে কোন আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা হয়নি।
সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিলের মাঠে ‘মাওলানা মো. আব্দুল হাকিমকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। ব্যানার ফেস্টুন টানানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে প্রচার প্রচারণার সুযোগ নেই। কেন্দ্র থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে, এলাকাবাসী যদি করে থাকেন সেক্ষেত্রে তো আর প্রার্থী দায়ী না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জামায়াত নেতা বলছেন, বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলায় হাকিমের বিরুদ্ধে একটা মামলা পর্যন্ত হয়নি। এমন একটা লোককে প্রার্থী করলে আমরা নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়াবো।
সার্বিক বিষয়ে নাটোর জেলা জামায়াতের আমির ডা. মীর নুরুল ইসলাম বলেন, গুরুদাসপুর উপজেলা আমির আব্দুল আলিম বহিষ্কৃত ছিলেন না। উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হওয়ায় তাকে সাময়িক সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছিল।
গুরুদাসপুর উপজেলা সাবেক আমির মো. আব্দুল খালেক মোল্লাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নিয়মের কথা আছে। সংগঠনের আনুগত্য ছাড়া সংগঠনের দায়িত্বে রাখা যায় না। এটা তো নিয়মের মধ্যেই আছে। সংগঠন যেভাবে পলিসি দেয়, জেলা সংগঠন যেভাবে পলিসি দেয় অধ:স্তন সংগঠনকে, এটা যদি কোনো সংগঠন, শুধু জামায়াতে ইসলামী না, কোনো সংগঠন শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দায়িত্বে টেনে নেওয়া হয়, ছেড়ে দেওয়া হয়, এটা রোকনদের ভোটে নির্বাচিত হয়।
কেন্দ্রের নির্দেশনা ছাড়া বিলবোর্ড দিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালানোর বিষয়ে জেলা জামায়াত আমির বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা সরাসরি যেটা আছে সেটা বলা আছে যে, প্রার্থীর পক্ষ থেকে সরাসরি এ ধরনের কিছু দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রার্থী দিতে পারবে না। কেউ যদি তার পক্ষে বিলবোর্ড দেয়, সে জন্য তো উনি দায়ী না। তারপরও সরাসরি বিলবোর্ড দেওয়ার দরকার নেই, এভাবে বলা হয়েছে।
রিফাত