জামালপুরের মাদারগঞ্জের তারতাপাড়া গ্রামে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুর-১ অনুসন্ধান প্রকল্পের গ্যাস কূপের খনন কাজের উদ্বোধন হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কূপটির খনন কাজের উদ্বোধন করেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। প্রত্যাশানুযায়ী গ্যাস মিললে এ কূপ থেকে দৈনিক গড়ে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার আশা কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এ অনুসন্ধানী খনন কাজটি করছে। এ বিষয়ে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাসের সংকট কমাতে আগামী দুই বছরে সারা দেশে ১০০টি নতুন গ্যাসকূপ খনন করা হবে। এছাড়াও পুরোনো ৩১ টি গ্যাস কূপ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে নতুন আবাসিক সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না।
জামালপুরের এই প্রকল্পের ব্যয় ১৬৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ৩ হাজার মিটার খননের পর ৪০০ বিসিএফ গ্যাস পাওয়া গেলে ভোক্তা পর্যায়ে এর বাজারমূল্য দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন যুক্ত হবে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের র্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা। বিগত সরকারের আমলে চাহিদা পূরণে অনেকটাই আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ে খাতটি। সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদা ক্রমবর্ধমান থাকায় এখনই আমদানি বন্ধ না করতে পারলেও দেশের অভ্যন্তরে থাকা কূপগুলো খনন ও অনুসন্ধানে ব্যপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে অন্তবর্তী সরকার।
২০২৫ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে অন্তত: ১০০ টি কূপ অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভারের বড় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এমনকি এসময়ের মধ্যেই প্রকল্পগুলোর কাজ সমাধানেরও তাগিদ দিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯ টি কূপের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একইসঙ্গে ৩১ টি কূপের ওয়ার্কওভার সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেড (বাপেক্স) ১০ টি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ২ টি ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে। এর বাইরেও বাপেক্সের নিজস্ব রিগ দিয়ে ২৮টি, বিজিএফসিএলের রিগ দিয়ে ২ টি, এসজিএফএলের রিগ দিয়ে ৩টি মোট ৩৩ টি কূপ খনন হবে। আর বাপেক্সের মাধ্যমে রিগ ভাড়া করে ১০টি কূপে চলবে খনন কাজ। আর আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাপেক্স ১৪ টি, বিজিএফসিএল ৭টি, এসজিএফএল ৫টি কূপ খনন করবে। সব মিলিয়ে ৬৯ টি কূপের খনন হবে।
কূপগুলো ওয়ার্কওভার কার্যক্রমে বাপেক্সের রিগ দিয়ে হবে ১৬টি, বিজিএফসিএলের রিগ দিয়ে ১২ টি, এসজিএফএল দিয়ে ৩টিসহ মোট ৩১ টি কূপের ওয়ার্কওভার হবে।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে তিতাস ফিল্ডে ৫টি কূপের মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে বাপেক্সে এবং আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে। ২০২৭ সালের মার্চ থেকে ২০২৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে হবিগঞ্জ, বাখরবাদ ও মেঘনা গ্যাস ফিল্ডে ৪টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে একইভাবে। ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৮ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়ে দোয়ারাবাজারে ১টি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ, বিয়ানীবাজার-৩ এ ১টি মূল্যায়ন কাম অনুসন্ধান কূপ এবং বিয়ানিবাজারে ৩টি ক’পের খনন হবে।
আশিক