লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা
রাজশাহী অঞ্চলে এবারও সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্য বিভাগ শতভাগ সফলের ঈঙ্গিত দিলেও কৃষকরা বলছেন আশঙ্কার কথা।
গত কয়েক বছরের তথ্য থেকে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগে কোনো বছরই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশপাশেও যেতে পারে না খাদ্য বিভাগ। কৃষকরা বলছেন, যখন মাঠে ধান কাটা এবং মাড়াই শেষ হয়, তখনই তাদের টাকার প্রয়োজন থাকে সব থেকে বেশি। ওই সময় সরকারিভাবে ধান চাল কেনা হয় না। একটু দেরিতে হয়। আবার শুকানো, পরিষ্কার করাসহ নানা ঝামেলাও পার করতে হয়। এসব কারণে কৃষক সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখান না।
গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোনো বারই রাজশাহী বিভাগে ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার আশপাশেও যেতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহী বিভাগে চলতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহেও ভাটা পড়েছে। প্রতি মণ ধানের সরকারি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩২০ টাকা। তবে, কৃষক বাজারে একই ধান বিক্রি করে পাচ্ছেন ১৫শ’-১৬শ’ টাকা। বাজারদর বেশি হওয়ায় গুদামে আমন ধান দিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের। এ অবস্থায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান এবারও সফল হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। কৃষকরা বলছেন, সরকারের কাছে বিক্রি করার চেয়ে বাইরে বিক্রি করাই ভালো। সরকার দাম দিবে ১৩২০ টাকা আর বাইরে দেড় হাজার টাকার ওপরে। কৃষকরা বলছেন, তারা সাধারণত ঋণ করে ধান চাষ করেন। তাই ধান ওঠামাত্র পাওনাদার এসে হাজির হয়। আবার শ্রমিকরা যারা ধান কাটেন তাদেরকে জমি থেকেই টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে জমি থেকে বাড়িতে না নিয়েই কৃষক তা বিক্রি করতে চান। এক্ষেত্রে দাম কিছুটা কম হলেও কৃষক সেই পথেই হাঁটেন। অথচ সেই দামও তারা সরকারি দামের থেকে মাঠেই বেশি পাচ্ছেন। আবার সরকারি গুদামে ধান দিতে হলে কিছুটা শুকিয়ে দিতে হয়, পরিষ্কার করে দিতে হয়। কিন্তু বাজারে বা মাঠে বিক্রি করতে এসবের ধার ধারতে হয় না। শুকাতে গেলে কিছুটা ওজন কমে। পরিষ্কার করতেও ওজন কমে। সঙ্গে এসব করতেও আবার শ্রমিক লাগে। এসব মিলিয়ে কৃষক ঝামেলা এড়িয়ে এবং নগদ টাকা পেতে মাঠেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত সরকার ধান ওঠার ১০-১৫ দিন পরে ক্রয় কার্যক্রম শুরু করে। এতে দেরি হয়ে যায়। পাশাপাশি দামও কম দেওয়া হয়। এজন্য কৃষক আগ্রহ হারান। তবে রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ অভিযানের শতভাগ লক্ষ্য অর্জনের আশা করছে খাদ্য বিভাগ। সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইন উদ্দিন বলেন, এবার খাদ্য বিভাগের সংগ্রহ অভিযান সফল হবে।
যশোরে আমন চাল সংগ্রহ
লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, জেলায় আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সংগ্রহ হয়েছে অর্ধেক। মিলারদের সঙ্গে চুক্তির ৮ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৬৮০ টন চালের মধ্যে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত আট উপজেলার মিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৪ হাজার ৩৯১ দশমিক ৮৭০ মেট্রিক টন চাল। অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ সফল করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের উদ্যোগে বুধবার কালেক্টরেট সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে অনুষ্ঠিত মিল মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ তথ্য উপস্থাপন করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সেফাউর রহমান।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে জেলায় আমন চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম মিল মালিকদের বলেন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহযোগিতা করতে হবে। যাতে খাদ্য ঘাটতি না হয়।