ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

সুন্দরী বড়ই!

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

সুন্দরী বড়ই!

সুন্দরি বড়ই!  নাম শুনলেই চোখ কপালে উঠারমত ঘটনা। বড়ই  গায়ের রং খয়েরি ও হলুদ হওয়ায় যে কারো নজর কাড়ে। তাই সবাই সুন্দরী বড়ই নামেই এই বড়ইর নাম করণ করেছেন।

পটুয়াখালীর বাউফলের মধ্য-মমিনপুর গ্রামের কৃষক শামিম দর্জির বাগানে ফলেছে এ সুন্দরী  বড়ই। তার  বাগানের গাছে গাছে বড়ইয়ের ছড়াছড়ি দেখে স্থানীয়দের মতো বিমোহিত শামিম দর্জি নিজেও।

শামিম দর্জি জানায়, উপজেলার বাজেমহল ওবায়দিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করেছেন তিনি। ২০১১ সালে বাবা আব্দুল কাদের দর্জির মৃত্যুর পর থেকেই মা আর ছোট একটি বোনসহ অসহায় টালমাটাল জীবন যাপন ছিল তার। এরপর ২০২১ সালে মা ফরিদা বেগমও পরপারে পাড়ি জমালে আরো বেশি অসহায় হয়ে পরেন তিনি। 

তিনি জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাড়ির আঙিনায় শাকসবজির চাষ আর ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে কোনমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাসহ পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিল দুই ভাইবোনের। একসময়ে তার উপার্জিত টাকা ব্যয় করে ছোট বোনের বিয়ে দেন।

প্রায় তিন বছর আগে ইউটিউবে দেখে উৎসাহিত হয়ে বরিশালের স্বরূপকাঠি এলাকার একটি নার্সারী থেকে আপেল কুল, নারকেলী কুল, সুন্দরি ও থাই জাতের শতাধিক বড়ই গাছের চারা এনে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে রোপন করেন।

গোবর আর জৈব সার প্রয়োগসহ পরিচর্যাও করেন নিয়মিত। বছর ঘুরতেই ওইসব গাছে বড়ইয়ের ফলন পায় সে। এবার তৃতীয় বছরে বাগানে বড়ইয়ের বাম্পার ফলন পাচ্ছেন তিনি। এখন রঙ ধরে পাকতে শুরু করেছে বাগানের সুন্দরি বড়ই। সুন্দরি বড়ইয়ের রঙে হাসি ফুটেছে শামিম দর্জির মুখেও। ছোট ছোট বড়ই গাছে বিপুল পরিমান ফল আসতে পারে তা ছিল তার ধারণারও বাহিরে।

তিনি আরো জানান, এ অঞ্চলে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে স্থানীয় জাতের দু’একটি টকমিষ্টি স্বাদের বড়ই গাছ নজরে পড়লেও মাটির গুনাগুন বিবেচনায় গাজীপুর, টাঙ্গাইল, শেরপুর, ময়মনসিংহের মতো বানিজ্যিকভাবে উন্নত জাতের মৌসুমি ফল বড়ইয়ের চাষ তেমনটি চোখে পড়তো না। পতিত জমিতে গড়ে তোলা তার বড়ইয়ের বাগান এখন আগ্রহ তৈরী করেছে স্থানীয়দের। 

বাগান থেকেই প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে যায় তার গাছের রঙিন সুস্বাদ সুন্দরি বড়ই। অনেকে আবার আগে থেকেই অর্ডার করে রাখেন। মাত্র পরিপক্ক হয়ে উঠতে না উঠতেই ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি নেমেছে। পুরো মৌসুমে দেঁড় লক্ষাধিক টাকার বড়ই বিক্রি করতে পারবেন আশা শামিম দর্জির।

গোবর আর জৈবসার ছাড়াও সাদাপাতা, মেহগিনি গাছের গোটা, হলুদ গুড়া, নিমপাতাসহ গাছগাছরা আর লতাপাতায় নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরী কিটনাশকই পোকামাকড় তাড়াতে ব্যাবহার করেন শামিম তার বাগানে। বাগানের কাজে স্ত্রীর সহোযোগিতা আর বন্ধুবান্ধব  উদসাহ দেয় তাকে। লাভবান হওয়ায় এখন আর ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালনা তিনি।

গ্রাম্য পশু চিকিৎসক ও কৃত্রিম প্রজনন কাজের সঙ্গে জড়িত থেকেও বড়ই চাষ আরো সম্প্রসারণের আশা রয়েছে তার।          

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, "চতালি অথবা টি-বাডিং কলমের মাধ্যমে বড়ই বা কুলের বংশ বিস্তার করা হলে গুনাগুন অক্ষুন্ন থাকে। মধ্য-বৈশাখ থেকে মধ্য আষাঢ় এই কাজের উপযুক্ত সময়। বড়ই গাছ ছাঁটাই করে দিতে হয়। ৬-৭ মিটার দূরত্বে ১ঘন মি. আকারের গর্ত করে তাতে ২০০-২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০-২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৪৫-২৫৫ গ্রাম এমওপি ও ২০-২৫ গ্রাম পচা গোবর সার প্রয়োগ করে ১০-১২ দিন পরে শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসের মধ্যে ভারি ও ক্ষারযুক্ত উচু ও মাঝারি উচু দো-আঁশ মাটিতে কুল চারা লাগাতে হয়। খরার দিনে এবং ফুল-ফল ধরার সময় সেচ দিতে হয়। ছত্রাক জনিত পাউডার মিলডিউ রোগ দেখা দিলে টিল্ট- ২৫০ ইসি পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। শামিম দর্জি পতিত জমিতে বিষমুক্ত নিরাপদ কুল চাষে সফলতা পেয়েছেন। বাজারে সরবরাহ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তণ ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এভাবে বেকার যুবকরা কৃষি উদ্দোক্তা হয়ে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তণ ও দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখতে পারেন।"

আশিক

×