ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

ছেলের হাতে পিতা খুন! 

নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ বরিশাল। 

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

ছেলের হাতে পিতা খুন! 

ছবি: বাদশা হাওলাদার

বরিশালের পারিবারিক দ্বন্দ্বে এক প্রবাস ফেরত একমাত্র ছেলে বৃদ্ধাকে হত্যা করেছে বলে জানায় বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। 

গত ২৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাত দশটায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটায় দাওকাঠী  এলাকা থেকে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা যায়, ১২নং রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের মৃত আতাহার উদ্দীন হাওলাদারের পুত্র রুস্তম আলী হাওলাদার (৭৫), গত বছর ১৭ এপ্রিল সকাল ১০ টায় নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুঁজির একাপর্যায়ে ১৯ এপ্রিল বিকেল ৩ টায় বাড়ির পাশের কচুক্ষেতে রুস্তুম আলী হাওলাদারের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। 

এরপর রুস্তুম আলী হাওলাদারের একমাত্র ছেলে বাদশা হাওলাদার (৪৫) পিতার মৃত্যুতে ২০ এপ্রিল বাকেরগঞ্জ থানার অপমৃত্যু একটি মামলা দায়ের করেন। লাশ ময়না তদন্ত করতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। 

পরবর্তীতে গত ২৮ ডিসেম্বর লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে রুস্তুম আলী হাওলাদারকে হত্যা করা হয়েছে।

২১ জানুয়ারি রুস্তুম আলী হাওলাদারের হত্যাকান্ডের বিষয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। 

বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ শরিফ উদ্দীনের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আলাউল হাসান, বাকেরগঞ্জ সার্কেল, বরিশাল মহোদয়ের দিক নির্দেশনায়, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব সুরেজীত বড়ুয়ার নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/ মোঃ ফোরকান মিয়া, এসআই (নিঃ)/ মোঃ সোহেল রানা, এসআই (নিঃ)/ মোঃ রিয়াজ উদ্দিন সহ সঙ্গীয় ফোর্সের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করার অভিযান চালায়।

 
রুস্তুম আলী হাওলাদার নিখোঁজ হওয়ার পর হতে তার একমাত্র ছেলে বাদশা হাওলাদার (৪৫) এর দৈনন্দিন অস্বাভাবিক জীবন-যাপন ও আচরণ, সহেন্দজনক কথাবার্তা ও নিয়োজিত বিশ্বস্থ সোর্সের নানাবিধ তথ্যে জোড়ালো সন্দেহের প্রেক্ষিতে বাদশা হাওলাদার (৪৫) কে ২২ জানুয়ারি বিকাল অনুমান ৫:৩০ মিনিটে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

জানা যায়, তার পিতা রুস্তুম আলী হাওলাদার জীবন ও যৌবনের সোনালী সময়গুলো পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়ন ও ভবিষ্যত বিনির্মানের স্বাপ্নে প্রবাসে কর্মজীবন কাটিয়ে বার্ধক্য জীবনে বাড়ি ফিরে আসেন। নিজ বাড়ির অদূরে বাকেরগঞ্জ থানার দাওকাঠী গ্রামে একটি দোতলা পাঁকা ভবন নির্মান করে স্ত্রী- সন্তান সহ পরিবারের সকলকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। 

পরিবারের সকল সদস্যদের পারিবারিক আচার আচরণে কোনরূপ ভুল হলে রুস্তুম আলী হাওলাদার রেগে যেতেন। পরিবারের সবাই রুস্তুম আলীকে শত্রু ভাবতে শুরু করে। সে তার সারা জীবনের উপার্জিত অর্থ-বিত্ত দিয়ে একমাত্র ছেলেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। 

কিন্তু তার অভিভাবকত্ব ও অনুশাসন পরিবারের কেউ সহ্য করতে না পেরে একমাত্র ছেলে বাদশা হাওলাদার , পিতা রুস্তুম আলী হাওলাদারকে হত্যা করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে পরিবারকে অবারিত স্বাধীনতা প্রদানের জন্য পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করে। নানান প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকায় হত্যা করতে না পারলেও গত বছরের ১৭ এপ্রিল  সকাল অনুমান ১১.৩০ ঘটিকায় রুস্তুম আলী হাওলাদার বাড়ির সামনে কচুক্ষেতে কাজ করার সময়ে বাদশা হাওলাদার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার উদ্দেশ্যে একটি লাল রংয়ের গামছা দিয়ে রুস্তুম আলীর গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। 

কচুপাতার আড়ালে লাশ গোপনে লুকিয়ে রেখে বাদশা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে থাকে। আসামী বাদশা  তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, হত্যাকান্ড সংঘটন ও হত্যার পরবর্তী সময়ে নিজেকে আড়াল করার নানান কৌশলের কথা সবিস্তারে প্রকাশ করে। 

২৩ জানুয়ারি বাদশা হাওলাদার কে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করলে, স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দেন। 

শিলা ইসলাম

×