ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

বিপন্ন উত্তরাঞ্চল

কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে সূর্য বেড়েছে শীতের প্রকোপ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে সূর্য বেড়েছে শীতের প্রকোপ

ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে নীলফামারীর সৈয়দপুর সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়

মাঘের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে শীতের তীব্রতা যেন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হিমবায়ুর কনকনে শীতের কবলে পড়েছে নীলফামারীসহ উত্তরের জনপদ। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জবুথবু জনজীবন। ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে পুরো উত্তরাঞ্চল। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। 
নীলফামারী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, তীব্র শীতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল থমকে গেছে। বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির, সঙ্গে বইছে ঠান্ডা বাতাস। কুয়াশার দাপটে পথঘাট ভিজে একাকার। ৫০ হাত দূরত্বের বস্তুও অস্পষ্ট। টানা পাঁচদিন ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বৃহস্পতিবার ছিল কুয়াশার ভয়াবহতা। যানবাহনের হেডলাইটও কাজ করছে না।

ফলে, বেশকিছু গাড়ি সড়ক ছেড়ে জমিতে ছিটকে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমন কুয়াশা-এর আগে দেখেননি বলে জানালেন গাড়িচালক ও কৃষকরা। মেঘে ঢাকা আকাশ ফুটে বেরিয়ে আসতে পারছে না রোদ্রের কিরণ। ফলে, শীতের মাত্রা ক্রমেই কাবু করেছে উত্তরাঞ্চলকে। 
এদিকে, শীতের তীব্রতায় পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন ছিন্নমূল ও অসহায় নি¤œ আয়ের মানুষ। রিক্সা ও ভ্যানচালকদের আয় কমে গেছে। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। 
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু বিভাগের চিকিৎসক মাহফুজার রহমান বলেন, শীতজনিত রোগ বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে।

ইটাখোলা গ্রামের কৃষক ইসছান আলী বলেন, এমন কুয়াশা আগে কখনো দেখিনি। ঘন কুয়াশায় আলু ও বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। খরচ বাড়ছে। ক্ষেতের আলু ও বীজতলা রক্ষায় প্রতিদিনই ছত্রাকনাশক ওষুধ ¯েপ্র করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। 
নীলফামারী সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম জানান, নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের আট জেলায় সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য কাছাকাছি চলে এসেছে। এমন কি চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের পার্থক্যে চলে আসায় ও ঘন কুয়াশার কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। কুয়াশায় সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উড়োজাহাজ চলাচল। নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল ৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। 
কুড়িগ্রামে চারদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ক্রমাগত তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিশু-বৃদ্ধসহ শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। চারদিন ধরে দিনের বেলায় সূর্যের দেখা না মেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, দুই-একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও হ্রাস পাবে। সঙ্গে বইবে হিমেল হাওয়া। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ শাখার তথ্য অনুযায়ী জেলায় এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার পিছ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা ৯ উপজেলায় বণ্টন করা হয়েছে।
দিনাজপুরে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও কনকনে হিম হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে এ অঞ্চলে। তিনদিন ধরে দেখা নেই সূর্যের। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা। এতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। কষ্ট বেড়েছে খেটে খাওয়া ও নি¤œ আয়ের মানুষের। শীতে বেশি বিপাকে পড়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। গত কয়েকদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের এ জেলায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ।

কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে। কৃষক রহমান মিয়া বলেন, কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। বোরো ধানের জন্য জমি তৈরি করেছি। কাজের জন্য এখন কৃষি শ্রমিক পাচ্ছি না। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার।
পীরগঞ্জে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, তিনদিন ধরে পীরগঞ্জ উপজেলায় হাড় কাঁপানো শীত ও শৈত্যপ্রবাহ চলমান রয়েছে। প্রচ- শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। নিম্ন আয়ের মানুষ খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ কাজে যেতে পারছে না। শীতে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শীতের তীব্রতায় অনেকের ধারণা করছেন গত ১০ বছরে পীরগঞ্জ উপজেলায় এত শীত হয়নি। বিশেষ করে বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা বিপাকে পড়েছে। 
মাগুরায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, প্রচ- কুয়াশায় মাগুরায় তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সূর্য দেখা যায়নি। ভোরে চারদিক কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দরিদ্র মানুষ। বৃদ্ধ ও শিশুরা ঠা-ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসকের চেম্বারে রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে।  
বাগেরহাটে নৌযান চলাচলে ধীরগতি ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, সুন্দরবনের এই উপকূলীয় জেলায় তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশায় স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। বুধবার সন্ধ্যা থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে চারদিক আবৃত হয়ে যায়। কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়েও স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। দক্ষিণাঞ্চলে সকল নৌযানের চলাচলেও গতি ধীর হয়ে পড়েছে।

তীব্র শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, বাতব্যথা, বসন্ত, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের উপদ্রব বেড়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় ফসলের বীজতলা ঠিকমতো পরিচর্যা করা যাচ্ছে না। কুয়াশায় চারা ও পানবরজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ॥ তাপমাত্রার মাপন যন্ত্রের পারদ কিছুটা ওপরে উঠলেও বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ে দিনভর কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। তীব্র শীতে কাবু এ জনপদের মানুষ।
সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় মৃদু হিমশীতল বাতাস। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির ফোটার মতো ঝড়তে থাকে কুয়াশা। কুয়াশার সাদা চাদরে ঢেকে যায় চারদিক। দেখা মেলে না সূর্যের। এমন বিরূপ হাওয়ায় জন জীবনে ভোগান্তি বেড়ে উঠেছে চরমে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না মানুষজন। সবচেয়ে ভোগান্তিতে স্বল্প আয়ের মানুষ। শীতের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে গ্রামের মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে সন্ধ্যার পর থেকে বেশি ঠা-া অনুভূত হচ্ছে।

সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। অন্যদিকে, আলু, রসুন ও বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকেরা।

×