ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

পানি না পেয়েও বিল দিতে হচ্ছে বরিশাল নগরবাসীকে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

পানি না পেয়েও বিল দিতে হচ্ছে বরিশাল নগরবাসীকে

নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে না পারলেও শতভাগ পানির বিল আদায়

নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে না পারলেও শতভাগ পানির বিল আদায় করে নিচ্ছে বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এমনকি যে এলাকায় পানির লাইন এখন পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি, সেখান থেকেও পানির বিল আদায় করা হচ্ছে। ফলে বিসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।
তবে বিসিসি কর্তৃপক্ষের দাবি এটা বিধিসম্মত, নগরবাসী তা মানতে নারাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে মাত্র ৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানির সংযোগ রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শতভাগ এলাকা থেকেই পানির বিল আদায় করে নিচ্ছে।

কখনো তা ‘বিল’ নামে কখনো বা ‘রেট’। মোট ৩৪ হাজার পানির লাইন বাবদ বছরে আদায় করা হচ্ছে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। লাইনে এক ফোটা পানি না আসলেও এই বিল দিতে হবে আর পানির লাইন না থাকলেও রেট দিতে হবে। 
সম্প্রসারিত এলাকার একাধিক পানির গ্রাহকরা জানিয়েছেন, বাড়ির প্ল্যান পাস হবার পর থেকেই মাসে দুইশ’ টাকা করে পানির বিল দিতে হচ্ছে। অথচ আমরা এক ফোটাও পানি পাইনা। শুধু শুধু ওরা এই বিল নিচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছেন, এলাকায় ৫০-৬০টি উঁচু ভবন রয়েছে। যার একটি বাড়িতেও পানির লাইন নেই। আমরা করপোরেশনের কোন পানি পাই না। অথচ পানির বিল দিতে হচ্ছে।
যারা টিউবওয়েল বসাচ্ছেন তাদের ওপর চার্জ ধার্য করা হয়েছে। যেসব স্থানে পানির লাইন নেই, সেখানে নতুন রাস্তা করা হলেও নেওয়া হচ্ছে না পানির লাইন। বহু ধর্ণা ধরেও উপায় মিলছে না নগরবাসীর।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এমনিতেই পানির লাইন নেই, পানিও পাই না। নিজের পানি নিজে পেতে যখন টিউবওয়েল বসাতে চাই, সেক্ষেত্রেও বিসিসি কর্তৃপক্ষকে ৩৫ হাজার টাকা চার্জ দিতে হচ্ছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, আমরা লাইন প্রতি সর্বনিম্ন একশ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা পানির বিল আদায় করে থাকি। মাসিক হিসেবে প্রতি তিন মাসে গ্রাহকদের বিল দিয়ে থাকি। বছরে ৩৫ ভাগ বিল বকেয়া থাকে।

তিনি আরও বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন সাত কোটি লিটার পানির দরকার। পাঁচটি ওভার হেড ও ৩৬টি পাম্প এবং পানির গাড়ির সাহায্যে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি চাহিদায় কাতর নগরবাসী ইতোমধ্যে প্রায় ২৮ হাজার নলকূপ বসিয়েছে। বিসিসির দরকার আরও অন্তর ১০টি উচ্চ ক্ষমতার পাম্প।
পানি বিভাগের কর্মী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা চাহিদার চেয়ে অর্ধেক পানি সরবরাহ করতে পারছি। উৎপাদনমুখী ১০টি টিউবওয়েল পাওয়া গেলে বিসিসি এলাকায় পানির পরিপূর্ণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এদিকে পানি সংকটের মুখেও পানি না দিয়ে জনগণের কাছ থেকে পানির বিল আদায় করাকে বিধিসম্মত বলে দেখছেন বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী।

তার মতে, বিসিসি এলাকায় যে মাধ্যমেই পানি নেওয়া হোক না কেন, তার কর বিসিসিকে দিতে হবে। তিনি বলেন, যেখানে পানি সরবরাহ করা হয় না সেখান থেকে আমরা পানির রেট আদায় করে থাকি। অর্থাৎ বিসিসি এলাকায় ভবনের নক্সা পাস হলেই এটা ধার্য হয়ে যায়। একইসঙ্গে টিউবওয়েল স্থাপনেও আমাদের ধার্য আছে। এছাড়া যেখানে পানি সরবরাহ করা হয় সেখান থেকে আমরা বিল আদায় করে থাকি। বিসিসির বিধি অনুযায়ী এসব কিছুই ধার্য হয়ে থাকে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

×