ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

আশ্রয়ণের ৬০ ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে জমি দখল

৫ মাসেও টনক নড়েনি প্রশাসনের

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

৫ মাসেও টনক নড়েনি প্রশাসনের

সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামেয়া গুচ্ছ গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভেঙে ফেলা ঘর

সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া গুচ্ছগ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বিতাড়িত করে ৬০টি ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে জমি দখল করলেও ৫ মাসেও প্রশাসনের টনক  নড়েনি । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসন ২০২০ সালে সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া গ্রামে ভূমিহীন ৬০টি পরিবারকে দলিলসহ ঘর বুঝিয়ে দেয়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ওইদিনই সন্ধ্যা রাতে কয়েকশত লোক আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে আশ্রিত ভূমিহীন পরিবারগুলোকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ তাদের অস্ত্রের মুখে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে তারা। এরপর তারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০টি ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে ঘরের দরজা, জানালা, টিনের চালসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। 
ভাড়ারা পশ্চিম জামুয়া গুচ্ছগ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় প্রকল্পটিতে যেন টর্নেডোর আঘাতে  বসতঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। প্রকল্পের ৬০টি ঘরের সব ভাঙাচোরা। দরজা, জানালা, টিন, ইটের দেওয়াল কোনোকিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ভেঙে ফেলা ইট সুরকি চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ভেঙে ফেলা ঘরের লোহার রড বেরিয়ে রয়েছে। প্রকল্পের প্রবেশমুখে সাইনবোর্ডে টানানো হয়েছে।

সেখানে ভাড়ারা পশ্চিম জামুয়া গ্রামের আকরাম প্রামাণিক, উম্মত প্রামাণিক, আক্কাস প্রামাণিক, ইব্রাহিম প্রামাণিক, ইসমাইল প্রামাণিক, নায়েব আলী ও নবাব আলী এ জমির মালিক পাবনা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা চলমান আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রামবাসী জানিয়েছে জমি দখলকারীদের বেশিরভাগই জামায়াত অনুসারী দু’একজন বিএনপি সমর্থক।
সাংবাদিকের উপস্থিতির খবরে জমির মালিক দাবিদার নায়েব আলী ও আক্কাস প্রামাণিকের ছেলে আতিক  প্রামাণিক আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসে জানান পতিত সরকারের চেয়ারম্যান আবু সাইদ খান  সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের এ জমি জোর করে দখল নিয়ে প্রশাসনকে দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প করেছে। তারা আরও দাবি করেন এ জমি নিয়ে ২০১০ সালে ও ২০২০ সালে আদালতে মামলাও করেছি আমরা।  
গুচ্ছ গ্রামের বিতাড়িত আর এক বাসিন্দা বাচ্চু প্রামাণিকের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন জানান ওইদিন প্রথমে কয়েকজন লোক আসে। তার ঘণ্টাখানেক পর  ৩-৪শ’ লোক এসে এক ঘণ্টা সময় দিয়ে যার যা আছে তা টুপলাতে বেঁধে পালিয়ে যা বলেই  ভাঙচুর শুরু করে।  কি করব কাপড় চোপড় আর একটা ছাগল নিয়ে পালিয়ে আসি। পরে সেই ছাগল বিক্রি করে এ বাধে ঘর তুলে আছি বলে ফাতেমা বেগম হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকেন।

গুচ্ছগ্রামের বিতাড়িত বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের ছেলে আলম শেখ বলেন ‘ভাঙচুর শুরু হলে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। পরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার পর  দিনমজুরি করে বাঁধের ঢালে ছাপড়া তুলে বাস করছি ।’ ঘটনার পর প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন ভাড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা বাড়িঘর হারিয়ে এখন বাঁধের ওপর মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

তাদের না আছে টয়লেট না আছে পানির ব্যবস্থা। তিনি অতি দ্রুত গৃহহীন এসব বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম জানান আশ্রয়ণ প্রকল্পের ‘বাড়িগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে সে বিষয়টি জানা ছিল না। তবে নজরে আসার পর আমি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি পুরো বিষয়টি জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদি কেউ ভেঙে থাকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

×