নিহত রাকিব মহাজন
লিবিয়ার টর্চারশেলে নির্যাতনে মাদারীপুর সদর উপজেলার রাকিব মহাজন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের পরিবার জানান। দালালকে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েও রাকিবকে বাঁচানো গেলো না। গত ৩ বছর লিবিয়ার কথিত গেমঘরে দালালচক্রের নির্যাতনে মারা গেছেন বলে খবর পায় তার পরিবার। এ খবরে নিহতের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পাড়া প্রতিবেশীরাও। বুধবার রাতে রাকিবের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার পরিবার। রাকিব সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের পখিরা এলাকার নাজিমউদ্দিন মহাজনের ছেলে। নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার মৃত ফটিক মৃধার ছেলে জাহাঙ্গীর মৃধার প্রলোভনে পড়ে রাকিব মহাজন। জাহাঙ্গীর মৃধা তার ভায়রা শরীয়তপুর জেলার পালং থানার ধানুকা ইউনিয়নের ছোট বিনোদপুর গ্রামের সোহাগ মাতুব্বরের মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকায় ইতালিতে পৌছে দেয়ার চুক্তি করে। চুক্তি মোতাবেক ২৭ লাখ টাকা দিয়ে ৩বছর আগে রাকিব পাড়ি জমায় লিবিয়ায়। তবে লিবিয়ার নেয়ার পরে কথিত গেমঘরে রেখে আরো টাকার জন্য নির্যাতন চালাতে থাকে সোহাগ মাতুব্বর নামের এক দালাল। পরে রাকিবের পিতা নাজিমউদ্দিন ধার-দেনা করে আরো ৫ লাখ টাকা দেয় সোহাগকে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। লিবিয়ায় দুই বছর চার মাস অসহ্য যন্ত্রণা-নির্যাতন সহ্য করে কাটিয়েছে রাকিব।
আরো জানা গেছে, দুই বছর চার মাস পরে সোহাগের গেমঘর থেকে বেরিয়ে আরেক দালাল মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মন্দী গ্রামের মাজেদ খলিফাকে ধরে রাকিবের পরিবার। তাকেও ৮ মাস আগে ১৫ লাখ টাকা দেয় গেম করার জন্যে। কিন্তু তিনিও টাকা নিয়ে গেমঘরেই নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে রাকিব গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয় রাকিবের। তার মৃত্যুর খবর দালাল মাজেদ খলিফাই রাকিবের পরিবারকে জানায়। পরিবারের কাছে মৃতদেহের ছবি ও ভিডিও পাঠায়। এতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো পরিবারে।
এ ব্যাপারে নিহত রাকিবের পিতা নাজিমউদ্দিন মহাজন জানান, ‘দফায় দফায় টাকা দিয়ে আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি। এ পর্যন্ত সোহাগ আর মাজেদকে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছি। তারপরে এখন আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। কয়েকদিন আগেও আমার ছেলে ভিডিওতে তার নির্যাতনের কথা বলেছে। আর বাঁচার আকুতি করেছে। কিন্ত আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না।’
তবে অভিযোগের বিষয় স্থানীয় দালাল জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, ‘সোহাগ আমার ভায়রা হয় বলে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। কেউ বলতে পারবে না যে, আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আর ওই ছেলে অসুস্থ্য হয়ে লিবিয়ায় মারা গেছে। আমার ভায়রা বরং সেখানে ট্রিটমেন্ট করেছে। এর বেশি কিছু জানি না।’ তবে মাজেদ খলিফার পরিবার রাকিবের মৃত্যুর সংবাদ জানার পরে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের তথ্য মতে, মাদারীপুর গেলো বছর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জেলার অন্তত শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ২০০শ’ মামলা দায়ের হয়েছে পাঁচ শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে। কিন্তু মামলায় জামিন পেয়ে পুনরায় দালালিতে যুক্ত হয় তারা। তাই এদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি মাদারীপুরে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। আমরা জেলা পুলিশ এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্সে আছি।’
রাজু