ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

ঘুষের টাকা প্রতিমাসে ব্যাংকে নিতেন আলাউদ্দিন নাসিম

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

ঘুষের টাকা প্রতিমাসে ব্যাংকে নিতেন আলাউদ্দিন নাসিম

ঘুষের টাকা লেনদেনের চেক।

সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার ও শেখ রেহানার ফান্ড ম্যানেজার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে যেসব খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই শেখ হাসিনাও রেহানার নাম ভাঙিয়ে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক বনে যান তিনি। কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে মালিক সেজে প্রতিমাসে ঘুষের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নিতেন। পতিত শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজন হওয়ায় বিনা পূজিতে ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বিদেশে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।

ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সংবাদ মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক বলা হলেও এস আলমের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেডের মালিকানায়ও নাসিম রয়েছেন। প্রতিমাসে ব্যাংকে এসএস পাওয়ার থেকে মোটা অংকের চেক নাসিমের এবং তার স্ত্রী অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজুর নামে জমা হতো। এমন একটি চেকের কপি হাতে এসেছে।

বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী এই সাবেক এমপিকে ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প বাগিয়ে নেন এক আলোচিত ব্যবসায়ী। তাকে সামনে রেখেই চালানো হয় লুটপাট। তার নানান অপকর্ম ও দুর্নীতির খবর প্রচারিত হওয়ায় নড়ে চড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ফেনীর সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছি। তার অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছি। আমরা তার বিষয়ে সার্বিকভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। আগামী ১ মাসের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

জানা যায়, তিনি সাবেক আমলা ও ১৩ বছর ছিলেন শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নাসিম ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রতীকে নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, বিএনপি নেতাকর্মী এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের জুলুম-নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং সরকারি টেন্ডার বাণিজ্য করে অবৈধ উপায়ে শত কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ।

আলাউদ্দিন নাসিম কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য। ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগ আওয়ামী লীগের অভিভাবক। তার সক্রিয় ভূমিকায় চলত বৃহত্তর নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের প্রশাসন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্য মন্ত্রী-এমপিদের মতো আলাউদ্দিন নাসিমও আত্মগোপনে চলে যান।

নাসিম ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলি করে ১৩ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি। অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের নির্দেশে জুলাই ও আগস্ট মাসে ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে চলে ছাত্র হত্যা।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=Pyvq8j0gd9A

এম হাসান

×