ইতালির রোম থেকে ঢাকা আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি
বিমানের রোম ফ্লাইটে শ্বাসরুদ্ধকর ৬ ঘণ্টার অভিযানে কোনো বোমা মেলেনি। পাকিস্তানের একটি হোয়াটস অ্যাপ থেকে আসা এই বোমা হামলার হুমকির পর দিনভর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ছিল চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা। তবে এ ধরনের বোমা হামলার হুমকি থাকলে কিভাবে ধৈর্য, সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক শান্ত ও নিরাপদ রাখতে হয়- তার পরিচয় দিয়েছে বেসামরিক বিমানবন্দর চলাচল কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ করে- এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেউ যেন কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, সেজন্য পুরো বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। এ সময় ইমিগ্রেশন-কাস্টম সবকিছুই সচল ছিল। ওঠানামাও স্বাভাবিক ছিল। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া, বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিমান বন্দরকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হয়।
বুধবার রোম থেকে ঢাকায় আসা বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে (বিজি-৩৫৬) এমন নাটকীয় ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বুধবার সকালে ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সিডিউল ছিল। তবে এর কয়েক ঘণ্টা আগে বাঁধে বিপত্তি। ফ্লাইটটিতে বোমা থাকার একটি বার্তা পায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির ৬ ঘণ্টা। যদিও উড়োজাহাজটিতে তল্লাশি চালিয়ে বোমা বা বোমা জাতীয় কোনো বস্তুর উপস্থিতি পায়নি নিষ্ক্রিয়কারী দল।
ফ্লাইটে বোমা থাকার গুজব সংবলিত বার্তাটি পাঠানো হয় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। অপরিচিত একটি পাকিস্তানি নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বার্তাটি আসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে। পরে সেখানকার কর্মরতরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন।
খবর পাওয়ার পরপরই বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া, বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিমানবন্দরে ছুটে আসেন। শুরু হয় নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন। বিমান বাহিনীর একটি বোমা নিষ্ক্রিয় দল, কুইক রেসপন্স ফোর্স, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। তারপর চলে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান।
জানা গেছে, ওই ফ্লাইটটি বিমান রোম থেকে যাত্রা করে ঢাকায় ৯টা ২০ মিনিটে অবতরণ করে। ২৫০ জন যাত্রী ও ১৩ জন ক্রু ছিলেন। ঢাকায় আসার পর সর্বোচ্চ সতর্কতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রস্তুতি নেন বেবিচক চেয়ারম্যান। তাকে সহায়তা করে প্রতিটা সংস্থা। অভিযানের সময় যাত্রীদের দ্রুত বের করে, তিন চারটা লাইন করে, দ্রুত চেক করে টার্মিনালে নিয়ে আসা হয়। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ছিল টার্মিনালে। প্রত্যেকটা যাত্রী কো-অপারেশন করে।
অভিযান সম্পর্কে, চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া, দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, অপারেশনে কোনো ছন্দপতন হয় নাই। এজন্য তিনি বিমান বাহিনীর প্রধানের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ তাকে সংবাদটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই হাজির হয়ে যান।
তিনি বলেন, যখন আমরা তদন্ত করি তখন দুইটা ব্যাগে সন্দেহ করেছিলাম। আমরা প্রতিটা লাগেজ স্ক্যানিং করে নামিয়েছি। নিচে আবার স্ক্যানিং করেছি। গোটা ব্যাপারটা খুব সুন্দর করে করা হয়েছে। সবাই সুস্থ আছেন ভালো আছেন। হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের কন্ট্রোলরুমে মেসেজটি এসেছে, সেখান থেকে চলে গেছে ইডির রুমে, সঙ্গে সঙ্গে ইউএসই টিমকে অ্যালার্ট করা হয়। আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অ্যাকশনে নেমে পড়ি।
আমরা যখন যাত্রীদের প্রাণ রক্ষা নিয়ে কাজ করি, একটা থ্রেড হল, আমাদের শতভাগ প্রস্তুত নিয়ে কাজ করতে হয়। কারণ আমরা তো তখন জানি না যে, একটা সাজা নাকি মিথ্যা।
তথ্যদাতার সঙ্গে একাধিকবার মেসেজ আদান-প্রদান হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যদাতা দু’জনের কথা বলেছেন। তথ্য তথা একটি লাগেজের ছবিও দিয়েছেন। এই ধরনের লাগেজ হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। উনাকে কল করা আছে কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেন না। আমরা থ্রেট পাইলে যে প্রসেস নেওয়া দরকার আমরা সেটাই নিয়েছি। আমরাও সতর্ক ছিলাম, এটা হয়ত আমাদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য অন্য কোনো ঝামেলাও হতে পারত। অ্যালার্ট জারি করেছিলাম, যাতে প্রত্যেক লাগেজ, সতর্কতার সঙ্গে চেক করা হয়।
সফলতার সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে জরুরি বিকেল চারটায় এয়ারপোর্টের ডিএসও সেকশনে এক ব্রিফিংয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, আমাদের নিরাপত্তা যে কত সুসংহত, সেটা আমরা আজ বুঝিয়ে দিয়েছি। আমাদের প্রতিটি সদস্য আন্তরিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। এ ধরনের সংবাদ পাওয়ার পরপরই আমি সব কর্মকর্তাকে নিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
কোনো কিছু না পাওয়া গেলেও আমরা প্রতিটি তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সবসময়ই জিরো টলারেন্স। আমাদের আভিযানিক কার্যক্রমের সময় বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। আভিযানিক ওই কার্যক্রমের সময় কেউ যেন বিশৃঙ্খলা না ঘটাতে পারে সেজন্য আমরা সতর্ক ছিলাম।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, বিস্ফোরক থাকার তথ্য প্রথম আসে এপিবিএনের কাছে। সেখান থেকে অপারেশন কন্ট্রোল রুমে জানানো হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করি। যে কোনো ধরনের হুমকি এলে আমাদের এ রকমই পদক্ষেপ নিতে হয়। আমাদের কাছে একজন যাত্রীর জীবন অনেক মূল্যবান।
যদি ওই ফ্লাইটে একজনও যাত্রী থাকত আমরা একই ধরনের পদক্ষেপ নিতাম। দীর্ঘ তল্লাশির পরও কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রতিটি যাত্রী সহযোগিতা করেছেন। তাদের কোনো কিছু খোয়াও যায়নি। খুব সুন্দরভাবে এই কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এ ধরনের তথ্য দিয়ে আমাদের একদিকে ব্যস্ত রেখে অন্যদিকে কেউ যেন কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, সে কারণে বিমানবন্দরজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। এ সময় ইমিগ্রেশন-কাস্টম সবকিছুই সচল ছিল। ওঠানামাও স্বাভাবিক ছিল। আমরা আমাদের এই বিমানবন্দরকে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও কোনো কিছু পাওয়া যায়নি, তারপরও ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ব্যবস্থা চালু রাখব।