ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

কলাপাড়া

স্লুইস ধসের শঙ্কায় ৫০ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০০:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

স্লুইস ধসের শঙ্কায় ৫০ গ্রামের মানুষ

.

ছয় ভেন্টের জীর্ণদশার স্লুইসসহ চলাচলের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কলাপাড়ার সঙ্গে তালতলীর তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিচ্ছিন্নের শঙ্কা রয়েছে তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া, বগী ও কড়ইবাড়িয়ার সঙ্গে কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অবস্থা এমন হয়েছে যে, স্লুইস সংলগ্ন কচুপাত্রা নদীর দুই পাড়ের অন্তত ৩০ হাজার কৃষক কৃষিকাজ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। 
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়ন ছাড়াও বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়ই বাড়িয়া, পঁচা কোরালিয়া ও বগী ইউনিয়নের অন্তত ৫০ গ্রামের কৃষকের কৃষিকাজে এই স্লুইসটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু ৬৫ সালের দিকে নির্মিত এ স্লুইসটির বর্তমানে জীর্ণদশার যেন শেষ নেই। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় ভেন্টের স্লুইসটির দুই দিকের মূল পিলারের পলেস্তরা খসে পড়ছে। রডগুলো জং ধরে বেরিয়ে গেছে। কপাটগুলো লোনা পানিতে নষ্ট হয়ে আছে। গেট থাকলেও খোলা।
অনবরত লোনা পানি ওঠানামা করছে। সামনের দুই দিকের গাইড ওয়াল অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুই দিকের নিরাপত্তা রেলিং উধাও হয়ে গেছে। পানি ওঠানামার সময় ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। মনে হয় এই বুঝি ধসে পড়বে। প্রত্যেকটি গেটের ওপরে ঝোলানো রয়েছে একটি করে বেহুন্দী জাল। যা পেতে মাছ ধরা হয়।
পানি উন্নয়নবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে স্লুইসটি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে কয়েকবার নামকাওয়াস্তে কপাট পাল্টানোসহ টুকিটাকি মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে জরাজীর্ণের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এলাকার লোকজন খোলামেলা জানিয়েছে, এই স্লুইসটি পরিণত হয়েছে সোনার খনিতে। কপাটগুলোর সামনে জাল পেতে মাছ ধরে একটি মহলের দৈনিক আয় পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে অন্তত ৩০টি। মামলা হয়েছে অসংখ্য। যখন যারা ক্ষমতাসীন থাকেন তাদের দখলে থাকে স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ। স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ করে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে অনেকের। কিন্তু  জীর্ণদশার পরিবর্তন ঘটেনি। এলাকাবাসীর দাবি এই স্লুইসটি ফের জরুরিভাবে নির্মাণ করা হোক। নইলে বিধ্বস্ত হয়ে এলাকার ব্যাপক সর্বনাশ হয়ে যাবে। 
এখন স্লুইসটির কপাট খোলা থাকায় প্রাকৃতিকভাবে পানি ওঠানামা করছে। পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেতরের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্টে প্রায় দুইশ’ মিটার বাঁধের টপসহ স্লোপ ভেঙে গেছে। কাঁঠালপাড়া গ্রামের মসজিদটি এখন বিলীনের শঙ্কায় রয়েছে। চলাচলের খালের পাড়ের একমাত্র সড়কটিও বহু অংশে ভেঙে গেছে।  কাঁঠালপাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, স্লুইস ভাইঙ্গা যাইবে। ওয়াপদা রাস্তা ভাঙছে। মসজিদ ও টিউবওয়েল ভাইঙ্গা যাইতেছে। শিক্ষার্থী তানজিলা জানায়, স্লুইস ভাইঙ্গা গেলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের মন্তব্য, রাস্তাসহ স্লুইস ভাঙলে সমস্যার শেষ থাকবে না। প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী জানান, স্লুইসটি যে কোনোভাবে রক্ষা করতে না পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বড় সমস্যা হবে। স্কুলের অর্ধেক ছাত্র-ছাত্রীর চরম সমস্যা হবে। জানা গেছে, স্লুইসটির ওপর দিয়ে তালতলীর সঙ্গে কলাপাড়ার সংযোগ সড়ক রয়েছে। কৃষকের মন্তব্য এটি বিধ্বস্ত হলে হাজার হাজার কৃষক পরিবার নিস্ব হয়ে যাবে। কৃষিকাজ ভেস্তে যাবে। লোনা পানিতে সব সয়লাব হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৪৪ নম্বর পোল্ডারের সিক্স ভেন্টের এ স্লুইসটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নতুন করে করতে অন্তত আট কোটি টাকা প্রয়োজন। 

×