ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন

১১ করণীয় নির্ধারণ

নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

১১ করণীয় নির্ধারণ

সময় দেওয়া হয়েছে ৪ মাস। আর ১১ করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। এ সময়ের  মধ্যেই  জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে দৃশ্যমান বেশকিছু পদক্ষেপের বাস্তবায়ন দেখতে চায় সরকার। এ জন্য জলাবদ্ধতা নিরসনের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পাওয়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক) বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারের তিন উপদেষ্টা। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার নগরীর বিভিন্ন খাল ও প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন তিন উপদেষ্টা। আর রবিবার বৈঠক করে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন না হলে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বরং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চসিক (চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন) ও চউক কর্মকর্তারা বলছেন, এবার দৃশ্যমান কাজের গতি বাড়বে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খোদ প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বদ্ধপরিকর, তারা কর্মপন্থা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। একইভাবে সমস্যার সমাধানে ঢাকা থেকেও বেশকিছু বিষয়ের সুরাহাও তারা করবেন।
রবিবারের বৈঠকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ করণীয় নির্ধারণ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে নগরীর সকল ধরনের পাহাড় কাটা বন্ধ করা, প্রাথমিক ও দ্বিতীয় ও টারশিয়ারি ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা, চউকের প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন ১৭টি স্লুইচ গেটের মধ্যে ১৫টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের ২১টির মধ্যে ১২টি আগামী মে মাসের মধ্যে চালু করা। সিটি করপোরেশনকে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চসিককে বারইপাড়া খাল খননের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা ও মে মাসের মধ্যে এ খালের সকল বর্জ্য পরিষ্কার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় করবে বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি। এ কমিটিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চউক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর আওতায় চলমান খাল খনন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খালগুলো দখলমুক্ত করা হবে। এ ছাড়া কর্ণফুলীর প্রয়োজনীয় নাব্য ও গভীরতা বজায় রাখার জন্য ড্রেজিং ও জলাবদ্ধতার হটস্পটগুলোতে পাম্পহাউজ চালু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আগামী মে মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। প্রকল্পগুলোর বাইরে থাকা ২১টি খাল ও নালার বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সেবা সংস্থাগুলোর প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান সুফল পাওয়া যাবে। কারণ প্রকল্পে থাকা ৩৬টি খালের মধ্যে ১৯ খালের কাজ শেষ। সেগুলো হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। খালগুলো যদি আবর্জনামুক্ত রাখা যায় এবং ওয়াসা যেভাবে তাদের সংযোগগুলো শহরের নালা থেকে সরিয়ে নিচ্ছে তাতেই উপকৃত হবে নগরবাসী। কারণ নালাগুলোতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে ওয়াসার সংযোগগুলো। ওয়াসার পাইপে আটকে থাকে বিভিন্ন আবর্জনা। এ জন্য বিভিন্ন নালা থেকে ওয়াসা সংযোগ লাইন সরিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সার্কিট হাউসের সভায় গুরুত্বপূর্ণ তিন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। খোদ প্রধান উপদেষ্টা তাদের পাঠিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করতে। বিদ্যুৎ ও খনিজ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রবিবার বৈঠকে জানিয়েছেন, সমস্যার সমাধান না হলে টাকা ব্যয় করে লাভ নেই। জনগণের সুফল পেতে হবে। যদি প্রকল্প করে ক্ষতি হয় তাহলে নতুন করে টাকা বরাদ্দ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।
অপরদিকে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একই বৈঠকে উপস্থিত সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের পাহাড় কাটা, খাল-নালায় পলিথিন ও প্লাস্টিক নিক্ষেপ এবং ব্যক্তির নামে খাল রেকর্ডের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম রবিবারের বৈঠকে সরাসরি বলেছেন, সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমস্যা আছে, এসব সমাধান করা হবে। সবার বক্তব্যের সারমর্ম ব্যর্থ হলেই এবার ব্যবস্থা নেবে সরকার।
উল্লেখ্য, মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৪৯  কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে চউক দুইটি, সিটি করপোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যেই জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
এবার জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে বর্ষার আগেই অর্থাৎ ৪ মাসের মধ্যেই বেশকিছু করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খাল দখল ও মামলাজনিত সমস্যা নিরসন এবং জমি অধিগ্রহণের সমস্যাগুলো সমাধান করতে খোদ ঢাকা থেকে সহায়তারও আশ^াস দিয়েছেন উপদেষ্টারা। তাই এবার দৃশ্যমান উন্নয়নের আশা করছেন সংস্থার প্রতিনিধিরা। কারণ তাদের ওপরই সরাসরি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সরাসরি ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকার। ফলে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে মাঠ পর্যায়ের দৃশ্যমান কাজ দেখাতে ইতোমধ্যে বৈঠকও শুরু করেছেন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা।

×