ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

কমিউনিটি ক্লিনিকের বেহাল দশা, মিলছেনা ঔষধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

কমিউনিটি ক্লিনিকের বেহাল দশা, মিলছেনা ঔষধ

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বহুমুখী সঙ্কটে রয়েছে গ্রামীন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। অধিকাংশ ক্লিনিকের ভবনগুলো জরাজীর্ণ ও বেহাল দশা, চাহিদার তুলনায় কম ঔষধ সরবরাহ থাকা এবং অনেক কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) বা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত ক্লিনিকে না বসায় দেখা দিয়েছে এই সঙ্কট। এতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার হতদরিদ্র জনসাধারণ। স্থানীয়দের দাবী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যদি নিয়মিত খোলা রাখা সহ চাহিদা পরিমান ঔষুধ পাওয়া যায় তাহলে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।   

অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জরাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলো মেরামতে তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। তাতেই  সেবার মান আগের চাইতে অনেক বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার সরকারের পরিকল্পনায় কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পটি আবারও চালু করা হয়। 

দূরত্ব বুঝে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৫ হাজার মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা। ওই সকল ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা থাকলেও মানুষ পাচ্ছে না মানসম্মত চিকিৎসাসেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার  কোন ধরণের তদারকি না থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। এর মধ্যে ১০টি ছাড়া অবশিষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত।

এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে বর্ষাকালে ছাদ চুঁয়ে পানি পড়া,ছাদের প্লাস্টার ধসে পড়া, দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়া, দরজা-জানালা ভাঙাচোরা, টিউবওয়েল নষ্ট, বাথরুমগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী ও ক্লিনিকের চারপাশে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থাকা রাতে ক্লিনিক গুলোর ভিতরে মাদক সেবীদের আড্ডা দিতে দেখা যায়। 

নাঙ্গলকোট  উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখের কাছাকাছি। তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা সহ  প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয়। বহু বছর পূর্বে ওই সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলো নির্মাণ করা হলেও তা সংস্কারের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওই ভবনে বসেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। বেশিরভাগ ভবনই এখন সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অযত্ন-অবহেলা, অনিয়ম আর জরাজীর্ণ ভবনের কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলার ৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সবগুলোতেই সিএইচসিপি রয়েছেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক সপ্তাহে ৬ দিন খোলা থাকার কথা এবং সিএইচসিপির পাশাপাশি ৩ দিন করে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার পরিবার পরিকল্পনা সহায়কের সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা। তবে বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলার ৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে সেগুলো তালাবদ্ধ। নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা ক্লিনিক বন্ধ করে বাড়ি চলে গেছেন। এতে করে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ গুলো চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। 

জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি পৌরসভা সেবা নিতে আশা অভিযোগ করে বলেন, ওই সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা সপ্তাহে ৪ দিনের বেশি ক্লিনিকে আসেন না। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে এলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তারা ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যায়। ক্লিনিকগুলো খোলা থাকা অবস্থায় গ্রামের তৃনমূল পর্যায়ের কিছু মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেলেও অনিয়ম ও অযত্ন-অবহেলায় চলছে ওই সকল ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম। বর্তমানে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যেন নিজেরাই রুগ্নবস্থায় পড়ে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

হেসাখাল ইউনিয়নের পাটোয়ার গ্রামের বোরহান উদ্দিন জানান, অধিকাংশ সিএইচসিপি প্রতিদিন ক্লিনিকে আসেন না। মাঝে মধ্যে আসেন। আর আসলে ও দুপুরের আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বেলায়েত হোসেন বলেন, যে সব ভবন গুলো পরিত্যাক্ত অবস্থা পড়ে রয়েছে সে গুলোর তালিকা করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে ঔষধের বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ আসলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জেন ডাক্তার রেজা মুহাম্মদ সরোয়ার আকবর বলেন, আমি পুরো বিষয়টি  অবগত নয় এটি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাজ তিনি এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন চাহিদা প্রেরণ করেনি।  তবে এই সকল জরাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সংস্কারের জন্য যদি কোন বরাদ্ধ থাকে আমরা চেষ্টা করব। তবে যে টুকু জানি  অনেক আগেই এই বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান কি অবস্থা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করব।    
 

রিফাত

×