ছবি : সংগৃহীত
বাজেট এলেই ধূমপায়ীদের মাথায় চিন্তার ভাজ পড়ে। কারণ প্রতি বাজেটেই বাড়ে সিগারেটের দাম। এবার বাজেটের আগেই দুঃসংবাদ ধূমপায়ীদের জন্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী সিগারেটের উপর আরোপিত কর হওয়া উচিত ৭৫ শতাংশ। আমাদের দেশে যা ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে গেছে, এ অধ্যাদেশের পর তা বেড়ে দাঁড়ালো ৮৩ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য এবং সেবার উপর মূল্য, মুষক ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। যার প্রভাবে বেড়েছে সিগারেটের দাম।
সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক দুটোই বাড়ানো হয়। ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিগারেটের মূল্যস্তর অনুযায়ী স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো শুল্ক কর পরিশোধ করছে। এতে খুচরা বাজারে বাড়তে শুরু করেছে সিগারেটের দাম।
এতে করে মোটামুটি সব ধরনের সিগারেটের দাম বেড়েছে প্রতি শলাকায় এক থেকে দুই টাকা। খুচরা পর্যায়ে বেনসন এন্ড হেজেস ব্র্যান্ডের প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ছিল ১৮ টাকা তা এখন ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোল্ডলিভ ব্র্যান্ডের প্রতি শলাকার দাম ১৩ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা। দুই টাকা বেড়ে প্রতি শলাকার লাকি সিগারেটের দাম ১২ টাকা এবং স্টার ব্র্যান্ডের সিগারেট ১০ টাকায় হয়েছে। এছাড়া ডার্বি, পাইলট, হলিউডের দাম এখন ৮ টাকা এবং রয়েলস এর দাম ৭ টাকা। এসব সিগারেটের দাম বেড়েছে এক টাকা।
সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো পাইকারি পর্যায়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। পাইকারি পর্যায়ে বিষকার বেনসেন এন্ড হেজেসের প্যাকেটের দাম ৩৭০ টাকা, জন প্লেয়ার গোল্ডলিভ ২৮০ টাকা, লাকি স্ট্রাইক ২১০ টাকা, স্টার ১৭২ টাকা, পাইলট, ডার্বি, স্টাইল, হলিউড ১৪৪ টাকা, রয়েলস ১২৬ টাকা।
বিশ শলাকার প্যাকেটের প্রতিটি ব্র্যান্ডের সিগারেটের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে।
কত শুল্ক বাড়ানো হলো সিগারেটের?
এনবিআর এর প্রজ্ঞাপন অনুসারে ১০ শলাকা হিসেবে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের দাম ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা ও তদুর্থ এবং সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। মধ্যমস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ও তদুর্থ এবং সম্পূরক শুল্ক সাড়ে ৬৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ। উচ্চস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের দাম ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা ও তদুর্থ এবং সম্পূরক শুল্ক সাড়ে ৬৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ।
সরকার কিভাবে সিগারেট থেকে রাজস্ব আদায় করে থাকে?
সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ব্যান্ড রোল থাকে। কারখানা থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানকে প্যাকেটের গায়ে ব্যান্ড রোল লাগিয়ে বাজারজাত করতে হয়। ব্যান্ড রোল বিক্রির মাধ্যমে সরকার সিগারেট থেকে রাজস্ব আদায় করে থাকে।
সিগারেট ও তামাক খাত থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায়। প্রতিটি শলাকার দামের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশই তাদের শুল্ক কর হিসেবে দিতে হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিগারেট খাত থেকে সব মিলিয়ে ৩৭৯১৫ কোটি টাকার শুল্ক কর আদায় হয়েছে। ৩১ টি কোম্পানি সিগারেট বিক্রির বিপরীতে সরকারকে এই শুল্ক কর দিয়েছে। মূলত ধূমপায়ীদের পকেট থেকেই গেছে এই টাকা। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানিগুলোর সিগারেট বিক্রির বিপরীতে ৩২৮১৬ কোটি টাকার শুল্ক কর আদায় করেছিল ভ্যাট বিভাগ।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ এর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ধূমপায় সংখ্যা ৩৯ শতাংশের মত। তামাক বিরোধী প্রচারণা করা প্রতিষ্ঠান ‘প্রজ্ঞা’ বলছে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০৫৬০ কোটি টাকা।
মো. মহিউদ্দিন