ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

মেঘনা নদী দখল: ইটভাটার মালিকদের লাগাম টানবে কে?

বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

মেঘনা নদী দখল: ইটভাটার মালিকদের লাগাম টানবে কে?

ছবি: জনকন্ঠ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইটভাটার পুরোনো ইট ও মাটি ফেলে মেঘনা নদী দখলের অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার অনুমোদিত ৫টি ইটভাটার প্রায় সবকটিতেই নিয়মবহির্ভূতভাবে ফসলি জমি ধ্বংস করে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দশানী গ্রামের খেয়াঘাট এলাকার এমএইচকে ইটভাটার মালিক ও সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে নদী ভরাটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ কারণে নদী সংকুচিত হয়ে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ভরাট কাজ বছরের পর বছর ধরে চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দশানী গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে এক সময় মেঘনা নদীর প্রবাহ ছিল। যদিও সময়ের সাথে নদীর গতিপথ বদলেছে, তবুও এই এলাকায় প্রায় ৪০০ ফুট লম্বা ও ২০০ ফুট চওড়া অংশে নদী এখনও প্রবাহিত। এটি উপজেলার সড়ক ও নৌ যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। প্রতিদিন অসংখ্য নৌযান এই পথে চলাচল করে।

 

সরেজমিনে দশানী গ্রামের পশ্চিম-উত্তর প্রান্তে খেয়াঘাট সংলগ্ন ইটভাটার এলাকায় দেখা গেছে, এমএইচকে ইটভাটা সংলগ্ন মেঘনা নদীর একটি বড় অংশ পুরোনো ইট ও মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। নতুন ইট বিক্রির জন্য ভরাট করা জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি কয়েকটি নৌকা থেকে মাটি নামিয়ে নদী ভরাটের কাজ চলছে।

দশানী ও শিবপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, হুমায়ুন চেয়ারম্যান ইট-মাটি ফেলে নদী ভরাট করে ফেলেছে। পাঁচ-ছয় বছর ধরে এই কাজ চলছে। তার প্রভাব বেশি হওয়ায় কেউ কিছু বলার সাহস পায় না।

 

এমএইচকে ইটভাটার মালিক হুমায়ুন কবীর দাবি করেছেন, তিনি নদী দখল করেননি। তিনি বলেন, “আমাকে একবার ইউএনও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। এগুলো আমার নিজের জমি। তাই এখানে ইট ও মাটি রেখেছি।” তবে জমির পরিমাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি অসংগত তথ্য দেন—একবার বলেন ১৫ কানি, আবার বলেন ১২ কানি, শেষে ১০ কানি।

উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের আকানগর গ্রামে কে.বি.সি ইটভাটায় বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কাঠের ব্যবহার দেখা গেছে। এই ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে ফসলি জমি দখল ও কৃষি জমি ধ্বংসের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় কৃষক সফিক মিয়া বলেন, “যেভাবে ইট-মাটি ফেলে ক্ষেত নষ্ট করা হচ্ছে, কিছুদিন পরে আমাদের এলাকায় চাষ করার জমি থাকবে না। তারা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের লোক। আমরা বাধা দেব কীভাবে?”

 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইটভাটাগুলোর বিষয় তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজকেই নায়েবকে পাঠিয়ে নদী ভরাট বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আমি নিজে ঘটনাস্থলে যাব।

 

 

তাবিব

×