ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

রাজশাহীতে আমের রাজ্যে তুলা চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

রাজশাহীতে আমের রাজ্যে তুলা চাষ

তুলা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আম চাষিরা তুলা উৎপাদনে ঝুঁকছেন

আমের জন্য খ্যাতি অর্জনকারী উপজেলার রাজশাহীর চারঘাটে তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। অনেকে আমের বাগান কেটেও তুলা চাষ করছেন। সরাসরি খেত থেকে মিল মালিকরা তুলা ক্রয় করায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তুলা চাষ।  

চারঘাট উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চলতি মৌসুমে চারঘাট উপজেলায় প্রায় ৪৪৫ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তুলনামূলক কম খরচ ও অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর নতুন করে কৃষক তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলার ১৪টি গ্রামকে ৪টি ব্লকে বিভক্ত করে তুলা চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া কম বেশি প্রত্যেকটি গ্রামেই তুলা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ উপজেলার কৃষকরা হোয়াইট গোল্ড-১ ও হোয়াইট গোল্ড-২, রুপালি (হাইব্রিড) প্রজাতি তুলার বীজ বপন করেছেন। চাষিদের ধারণা এবার বিঘা প্রতি প্রায় ১৮ থেকে ২০ মণ তুলার ফলন পাওয়া যাবে। যেখানে প্রতি মণ তুলা বিক্রয় হচ্ছে ৩৬০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা। মিল মালিকরা সরাসরি খেত থেকে তুলা চাষিদের কাছ থেকে তুলা ক্রয় করছেন।
উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের তুলাচাষি মাজদার রহমান জানান, তিনি প্রায় ২ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করছেন। সাথী ফসল হিসেবে লাল শাক উৎপাদন করে ইতোমধ্যে ২ বিঘা জমি থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘায় প্রায় ২০ মণ তুলার ফলন আশা করছেন। প্রতি বিঘা তুলা চাষে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা অধিক মুনাফা করতে পারছেন বলে তিনি জানান।
একই গ্রামের মাহার উদ্দীন জানান, অধিক লাভজনক, তুলনামূলক অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ ও তুলা পরবর্তী অন্য ফসলের ফলন ভালো হওয়ায় তিনি ১ বিঘা আমবাগান কেটে ফেলে তুলা চাষ শুরু করেছেন। তিনি চলতি মৌসুমে ভালো ফলন আশা করছেন।
স্থানীয় তুলাচাষি নাহিদ জানান, তুলা চাষে প্রণোদনা হিসেবে তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইউরিয়া, ডিএপি, কীটনাশক, পিজিআরসহ হাইব্রিড বীজ পেয়েছি। তুলা উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরতরা ভালো ফলন নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করেন। তাই তিনি এ বছর প্রায় ৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করছেন। জমি প্রস্তুত, সার, সেচ, কীটনাশক পরিচর্যাসহ উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন। তুলা অন্যতম অর্থকরী ফসল। উপজেলার একমাত্র বস্ত্র রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থানাপাড়া সোয়ালোজের নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান আলী বলেন, বস্তশিল্পের চাহিদা মিটাতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ বেল তুলার প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে প্রায় ১৫% দেশে উৎপাদন হচ্ছে। তুলার উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বিদেশ থেকে তুলা আমদানিনির্ভরতা কমবে বলে তিনি জানান।  রাজশাহীর প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মোজাদ্দিক আলী শামীম বলেন, চারঘাট উপজেলার অধিকাংশ জমি তুলাচাষের উপযোগী। সরকারিভাবে তুলার মূল্য বৃদ্ধি করায় কৃষকরা ন্যায্য দামে সরাসরি মিল মালিকের কাছে তুলা বিক্রয় করছেন। ফলে দিন দিন তুলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।

×