প্রতিকী ছবি
যশোরে ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) সিস্টেমে বেতন দেওয়ায় বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা হতাশায় ভুগছেন। মাসের প্রথমদিনে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্র কয়েক শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পেয়েছেন। জানুয়ারি মাসের ১৬ দিন পার হলেও অধিকংশ শিক্ষক-কর্মচারী এখনো ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি। জেলায় ছয় শতাধিকের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ রয়েছে। সেখানে কর্মরত কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র মূল বেতন পান। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, টিফিন খরচ ও যাতায়াত খরচ পান না। মূল বেতন নিয়েই শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। নতুন সিস্টেমে বেতন না পেয়ে এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে হতাশায় আছেন কেন বেতন হচ্ছে না ?
জানা গেছে, যশোর জেলায় ৫শ’ ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৮৯টি কলেজ রয়েছে। সবই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামে পরিচিত। এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন পান। কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। শিক্ষকতা পেশায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর থেকে ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিয়ে আসছে। এ পদ্ধতিতে বেতন বিলে স্বাক্ষর করতেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান। গত ডিসেম্বর ইএফটি সিস্টেম চালু হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের বেতন ইএফটি পদ্ধতিতে জানুয়ারি মাসের প্রথমদিন কিছু শিক্ষক-কর্মচারীদের হয়েছে। ১৬ দিন পার হয়ে গেলেও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এখনো বেতন পাননি। বেতন না পেয়ে প্রায় সবাই মানবেতর দিন পার করছেন। ভাতুড়িয়া হাইস্কুল ও কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুর হোসেন জানান, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক যেন একটি অভিশপ্ত শব্দ। ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে বেতন পেতাম মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে। দ্রুত বেতন পাওয়ার জন্য ইএফটি সিস্টেম চালু হয়েছে। কিন্তু ১৬ দিন পার হলেও এখন বেতন পাইনি। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি মাসের প্রথমদিনে এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারী হিসাব নম্বরে বেতন দিতে হবে’।
শার্শার নিজামপুর হাইস্কুলের ইসলাম শিক্ষার সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, ‘বেতন দিয়ে তার সংসার চলে। এক ছেলে, এক মেয়ে, মা ও স্বামী-স্ত্রী মিলে পাঁচজনের সংসার তার। ছেলে অনার্সে অধ্যয়নরত। মাসের প্রথম সপ্তাহে ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে হয়। ১৬ দিন পার হয়ে গেল তিনি এখনো বেতন পাননি। বড়ই বিপদে আছেন তিনি। যথাসময়ে বেতন দেওয়ার দাবি করেন তিনি’।
চৌগাছা এবিসিডি ডিগ্র্র্রি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম জানান, ‘ইএফটি সিস্টেমে তার কলেজে মাত্র ৮ জন বেতন পেয়েছেন। ৩৭ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বাকিরা এখনো বেতন পাননি। সবাই হতাশ। দ্রুতই বেতন দেওয়ার দাবি করেন তিনি’।
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন জানান, ‘ইএফটি সিস্টেমে প্র্রথম শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে চলতি সপ্তাহের সব শিক্ষক-কর্মচারীর হিসাব নম্বরে বেতন চলে যাবে’।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল খালেক জানান, ‘অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে এমপিওশিটে নামের বানান ও জন্ম তারিখের মিল নেই। সেজন্য জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এই জটিলতাগুলো নিরসনের কাজ চলছে। আশা করা যায় দুই-একদিনের মধ্যে সবার বেতন ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে চলে যাবে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। পরবর্তীতে কাউকে এ ধরনের জটিলতায় আর পড়তে হবে না’।