ছবি: জনকন্ঠ
পটুয়াখালীর বাউফলে অতি দরিদ্র নারীদের জন্য ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির কার্ডধারী নারীদের নামে বরাদ্দের চাল কাক পক্ষী খেয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করেছেন ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান গাজী। তিনি উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কেশবপুর ইউনিয়নের উত্তর কেশবপুর গ্রামের নাসির হাওলাদারের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ও একই গ্রামের মো. রাসেলের স্ত্রী মোসা. সীমা বেগম নামে দুই নারীর ভিডব্লিউবি কর্মসূচির চাল না দিয়ে কাক পক্ষী খেয়ে ফেলেছেন বলে তিনি একথা বলেন।
চাল না পেয়ে ওই দুই নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে আলাদা আলাদাভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দেওয়ার পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই দুই নারী।
অভিযোগকারী শাহিনুর আক্তার জানান, তিনি ভিডব্লিউবি কর্মসূচির তালিকাভুক্ত। তার কার্ড নম্বর ২১। বিগতদিনে তিনি প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছেন। ২০২৪ সালের এপ্রিল ও ডিসেম্বর মাসের ৬০ কেজি চাল তিনি পাননি। চালের জন্য তিনি প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছে গেলে চেয়ারম্যান তাকে বলেন ‘চাল কাক পক্ষীতে খেয়ে ফেলেছেন’।
আরেক অভিযোগকারী মোসা. সীমা। তার কার্ড নম্বর ২০। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের এপ্রিল, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর চার মাসের ১২০ কেজি চাল পাইনি। চালের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বলেন ‘ চাল কাক পক্ষীতে খেয়ে ফেলেছেন।
পরে প্যানেল চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ৩নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম চাল না দিয়ে জোরপূর্বক আমার ভিডব্লিউবি কার্ডে টিপসই দিয়ে বাধ্য করে। পরে ভিডব্লিউবি কার্ড নিতে চাইলে আমি জোর করে কার্ড নিয়ে আসি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় কেশবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়র্ডের (উত্তর কেশবপুর) শায়লা আক্তার, হ্যাপী বেগম, মোসা. হোসনেয়ারা ও হাসি বেগমসহ ১২ জন নারীর ৬৬০ কেজি চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহানের বিরুদ্ধে।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ২ নং প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম এবিষয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ আমার ওয়ার্ডে ২২ জন কার্ডধারী নারী ভিডব্লিউবি কর্মসূচির চাল পেয়ে থাকেন। মো. শাহজাহান গাজী প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত ৪ মাসের বরাদ্দের চাল নয়ছয় করেন। কার্ডধারীদের চাল না দিয়ে তিনি চাল আত্মসাত করেন। চাল চাইতে গেলে বলেন.‘ কাক পক্ষীতে খেয়ে ফেলেছেন।’ এবিষয়ে আমি প্রতিবাদ করলে আমার ওপর শাহজাহান গাজীর লোকজনগত ৮ জানুয়ারি আমার ওপর হামলা চালায়।
ইউপি সদস্য সাইফুল আরও বলেন, শাহজাহান গাজী প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্যাপক অনিয়ম তিনি করেছেন। জেলেদের চাল, জেলেদের মাঝে গরু বিতরণ, কৃষকের মাঝে সার বীজ ও কিটনাশক, টিসিবি পণ্য বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করেন শাহজাহান গাজী। তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। যে প্রতিবাদ করে, তার ওপর হামলা চালানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহান গাজী বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত নই।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাবিব