আবাদ মৌসুমে সার সংকট
পটুয়াখালীতে চলমান তরমুজ আবাদ মৌসুম সার সংকটে পড়েছেন চাষিরা। প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। অসহায় কৃষকরাও বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার বেশি দামেও মিলছে না সার। পটুয়াখালীতে তরমুজ মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ চলতি জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ২৪০ টন বিভিন্ন প্রকারের সারের চাহিদা দিলেও সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৩৭৩ টন। সার সংকটের কারণে এবার তরমুজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে চলতি বছর জেলার ৮টি উপজেলায় ২৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং এ পর্যন্ত জেলায় ১৩ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমিতে তরমুজ রোপণ করা হয়েছে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী গলাচিপা উপজেলায়। এ বছর এখানে ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও রাঙ্গাবালীতে ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর, বাউফলে ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর, হেক্টর, কলাপাড়ায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর, দশমিনায় ১ হাজার ৭২০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, দুমকিতে ৩৫০ হেক্টর ও মির্জাগঞ্জে ১৫৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গত বছর এ জেলায় ২০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি।
কৃষকরা জানিয়েছেন প্রতি একর জমিতে টিএসপি, ইউরিয়াসহ বিভিন্ন প্রকারের ১০ থেকে ১২ বস্তা সার প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজন মাফিক সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। সার সংকটের কারণ দেখিয়ে ডিলারও বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। রাঙ্গাবালী উপজেলার চর নজিরের কৃষক হামিরুল হোসেন জানান, তিনি এবার ২০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। তার কমপক্ষে ২০০ বস্তা সার প্রয়োজন হলেও এ পর্যন্ত তিনি বাজার থেকে মাত্র ৫০ বস্তার সার কিনতে পেরেছেন। তাও আবার অতিরিক্ত দামে। প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ১ হাজার ৬০০ টাকায় ও টিএসপি ১ হাজার ৯০০ টাকায় কিনেছেন তিনি। অথচ কৃষি বিভাগের নির্ধারিত দাম হচ্ছে ৫০ কেজির প্রতি বস্তার ইউরিয়া ১ হাজার ৩৫০ ও প্রতি বস্তা টিএসপি ১ হাজার ৬০০ টাকা। একই উপজেলার চর আগস্টির কৃষক হোসেন আকন জানান, তিনি ৯ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করছেন। তার ১০০ বস্তা সার প্রয়োজন হলেও তিনি বাজার থেকে ৬০ বস্তা সার কিনতে পেরেছেন। জেলার কলাপাড়া উপজেলার বানাতিপাড়া এলাকার কৃষক রুহুল আমিন জানান, তারা ১০ জন কৃষক মিলে ৫০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। তাদের ৫০০ বস্তা সারের প্রয়োজন হলেও কিনতে পেরেছেন মাত্র ২০০ বস্তা।
তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও প্রয়োজনমত সার কিনতে পারিনি। তাই এবার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছি।
রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া এলাকার সার ব্যবসায়ী কামাল পাশা জানান, তরমুজ চাষের জন্য এখন প্রচুর সারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমরাও চাহিদামাফিক সার সরবরাহ পাচ্ছি না। গত সপ্তাহে আমি ২০০ বস্তা সারের চাহিদা দিয়ে মাত্র ২০ বস্তা সার পেয়েছি। তিনি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এ জেলায় সারের সংকট চলছে। চলতি জানুয়ারি মাসে আমরা ২০ হাজার ২৪০ টন বিভিন্ন প্রকারের সারের চাহিদা দিলেও সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৩৭৩ টন।
তিনি আরও জানান, পটুয়াখালী জেলায় সারের গোডাউন ডিপো না থাকায় জেলার ডিলাররা পার্শ্ববর্তী জেলা বরগুনা থেকে বরাদ্দের সার উত্তোলন করত। তবে সংকট মোকাবিলায় আমরা বরগুনার পরিবর্তে বরিশাল গোডাউন ডিপো থেকে ডিলারদের সার সরবরাহের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাপ্তরিক চিঠি দিয়েছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই সার সংকট কেটে যাবে। তবে বেশি দামে কেউ সার বিক্রি করলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।