ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

প্রবাসী থেকে সফল উদ্যোক্তা: জিলানীর কুল বাগানের গল্প

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া) সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৫, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

প্রবাসী থেকে সফল উদ্যোক্তা: জিলানীর কুল বাগানের গল্প

প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে সফলতা অর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপ‌জেলার আইয়ূবপুর গ্রা‌মের আব্দুল কাদের জিলানী। মাত্র ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে চার বিঘা জমিতে গড়ে তোলা কুল বাগান আজ তাকে বছরে প্রায় দশ লাখ টাকার আয় দিচ্ছে। তার এই উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতিতে যেমন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে, তেমনি অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করেছে।

উদ্যোগের সূচনা ২০২১ সালের শেষ দিকে আব্দুল কাদের জিলানী ও তার পার্টনার মো. নাসির উদ্দিন তাদের পিতার জমি কাজে লাগিয়ে বলসুন্দরী ও কাশ্মিরি আপেল জাতের কুল চাষ শুরু করেন। জমিটি মরহুম তরিকুল আসলাম মাস্টারের ছিল। প্রথম বছর জমিতে পানি জমে যাওয়ার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও পরিশ্রম ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তারা সেটি কাটিয়ে ওঠেন।

কুলের মুকুল আসে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। ফরমালিনমুক্ত কুল প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়, যা স্থানীয় বাজারে সরাসরি সরবরাহ করা হয়। পাইকাররা বাগান থেকেই ফল সংগ্রহ করেন।

বাগানে প্রতিদিন আব্দুল কা‌দের জিলানীসহ ৩জন নিয়মিত কাজ করেন। সঠিক পরিচর্যা ছাড়া ভালো ফলন সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন। পরিচর্যার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, যাতে ফলের মান ধরে রাখা যায়।

বরই  শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিগুণেও অনন্য। এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক উজ্জ্বল করে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হার্টের জন্য উপকারী।

বরই কেবল তাজা খাওয়ার জন্যই নয়, এটি দিয়ে বিভিন্ন খাবারও তৈরি করা যায়। বরইয়ের আচার, ঝাল-মিষ্টি চাটনি, শুকনো বরই, জ্যাম-জেলি এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি করা হয়ে থা‌কে।

আব্দুল কাদের জিলানী আরও জমি পেলে কুল ছাড়াও অন্যান্য ফলের বাগান করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মাটিতে সঠিক পরিচর্যা করলে যে কোনো ফলের ভালো ফলন সম্ভব।

তার এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই কুল বাগান করতে আগ্রহী হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার ইচ্ছা, সবাই যেন বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হয়। কৃষি খাতের উন্নয়নে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।”

প্রবাস থেকে ফিরে নিজের দেশে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার এই গল্প প্রমাণ করে, ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে যে কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আব্দুল কাদের জিলানীর মতো উদ্যোগ যদি আরও ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি কৃষি খাতের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।

এবিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসিরুদ্দিন বলেন, জিলানীর কুল এখন পুরো এলাকায় একটা ব্রান্ড। তার বাগানের কুল মানেই হলো মিষ্টি, সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত। আমি সবসময়ই তার সাথে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। 

 

রাজু

×