ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১

পদ্মার মাটি লুট, হুমকিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:২০, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

পদ্মার মাটি লুট, হুমকিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ

সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ৬নং বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় মাটি এভাবেই কেটে নেওয়া হচ্ছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ৬নং বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিভাবে মাটি তোলার মচ্ছব চলছে। স্থানীয়রা বলছেন- বাঁধ থেকে মাত্র দেড়শ’ মিটার দূরে তোলা হচ্ছে মাটি। অপরিকল্পিত মাটি তোলার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটিও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে সারারাত পদ্মা নদী থেকে ট্রাক্টরে করে মাটি-বালু আনা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর মাটি-বালুমাটি বিভিন্ন ইটভাটা, প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির ভরাট হিসেবে চড়া দামে বিক্রি করছে। এই মাটি বিক্রি করে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অনবরত ট্রাক্টরভর্তি মাটি পরিবহনের কারণে ধুলাবালিতে রাস্তার পাশের বাসিন্দাদের প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু মাটি চক্রটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। এমনকি গত সাড়ে পাঁচ মাসে ওই এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকেই দেখা যায়নি। দেদার মাটি তোলা হলেও চালানো হয়নি কোনো অভিযান। ফলে মাটি চক্রের সদস্যরা এলাকায় রামরাজত্ব চালাচ্ছে। অবৈধভাবে পদ্মার মাটি তোলার তথ্য পেয়ে সরেজমিনে ৬নং বাঁধ এলাকায় সাংবাদিকরা গেলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ছুটে আসে চক্রের সদস্যরা। স্কেভেটর দিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে জায়গাটিতে যেতে চাইলে বাধা দেয় তারা। তাদের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় পরপর দুটি ট্রাক্টরবোঝাই মাটি গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছে। আরও একাধিক ট্রাক্টরে মাটি বোঝাইয়ের কাজ চলছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায় মাটি হরিলুট চক্রের দুজনের নাম। তারা হলেন- জাফরুল ইসলাম ও  আমিন । তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেকে ।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুম আলী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত পদ্মার মাটি তোলার কাজ হয়। ভেকু দিয়ে এসব মাটি তোলেন প্রভাবশালী মহলের সদস্যরা। পরে মাটিগুলো তুলে ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। মাটি পরিবহন করা ট্রাক্টরগুলো খুবই বেপরোয়া। যখন তখন ঘটতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালিনগরের এক বাসিন্দা বলেন, দিনরাত মিলিয়ে শতাধিক মাটিবোঝাই ট্রাক্টর সড়কটি দিয়ে যায় বিভিন্ন গন্তব্যে। গ্রামের সড়কগুলোতেও চালকরা খুবই বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালান। কয়েক দিন আগেই ট্রাক্টরচাপায় স্থানীয় একজন আহত হয়েছেন।
অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করা চক্রের সদস্য জাফরুল হোসেন বলেন, আমি এসব কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার দ্বারা এসব কাজ হয়ও না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন বলেন, এখানে মাটি কাটার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। পরের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের । চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছমিনা খাতুন বলেন, সম্প্রতি উপজেলার ৬নং বাঁধ এলাকাসহ কয়েকটি জায়গায় অবৈধভাবে মাটি তোলার অপরাধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, যারা মাটি কাটছে তারা অত্যন্ত গোপনে রাতের বেলাতে কাটছে। আমরা তাদের প্রশ্রয় দিইনি আর প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগও নেই।

×