ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

চুয়াডাঙ্গায় জামায়াতের কর্মীসভায় ডা. শফিকুর রহমান

বৈষম্যহীন মানবিক দুর্নীতি দু:শাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৯:২৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

বৈষম্যহীন মানবিক দুর্নীতি দু:শাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বৈষম্যহীন, মানবিক, দুর্নীতি, দু:শাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না পর্যন্ত আমরা থামবো না। অর্থাৎ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থামবে না। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মজলুম দল। সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ক্রস ফায়ারের নামেও হত্যা করা হয়েছে। হাট-ঘাট, মসজিদ-মাদরাসা এমনকি মন্দিরেও লুটপাট চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার
আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা চাটিবাটি নিয়ে পালিয়ে গেছে। দুর্নীতিবাজ সবাই পালিয়েছে।এই জাতির মধ্যে বীর সন্তানদের জন্ম হয়ে গেছে। এখন কাপুরুষ আর চোরের দল সুবিধা করতে পারবে না। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ঐতিহাসিক টাউন ফুটবল মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

আওয়ামী লীগের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে আমিরে জামায়াত বলেন, ‘ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা দেশের জ্ঞানী, শিক্ষিত, মার্জিত ও অভিজ্ঞ মানুষদের হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে নির্যাতন করেছে। তারা শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। তারা দেশের সম্পদও লুট করেছে। তারা উন্নয়নের বুলি শুনিয়েছে। 

তিনি বলেন, পর পর তিন তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানেরা বিপ্লব ঘটিয়ে ২৪-এ স্বাধীনতা এনেছেন। ফলে স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানোর মতো সৎ সাহস শেখ হাসিনার
ছিল না। যে কারণে তিনিসহ তার দোসররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যারা আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছে জনগণ তাদেরকে একদফা দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। 

ছাত্র-জনতার অবদানকে স্মরণ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে এই জাতি দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে, ইনশাআল্লাহ। তরুণ- যুব সমাজ চাঁদাবাজমুক্ত, দখলবাজমুক্ত ও পেশীশক্তিমুক্ত নতুন দেশ চায়। আমরাও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। এই প্রজন্ম বুকের রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা ধরে রাখব, ইনশাআল্লাহ।
এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা কারো টাকার কাছে নিজেদের ভোট বিক্রি করব না। ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচন কেন্দ্রিক সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। কালো টাকা ও পেশীশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না। যারা কালো টাকা দিয়ে ভোটের মাঠে আসবে, তাদেরকে না বলে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছে। এসব টাকা জাল ফেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে দেশে ফেরত আনতে হবে। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের খুঁজে খুঁজে এনে ওই কাশিমপুর জেলে পাঠাতে হবে। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন,
যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য খন্দকার আলী মোহসিন, ঝিনাইদহ জেলা আমির আবু বকর মুহা. আলী আজম, কুষ্টিয়া জেলা আমির মাওলানা অধ্যাপক আবুল হাশেম, মেহেরপুর জেলা আমির মাওলানা তাজ উদ্দীন খাঁন, নড়াইল জেলা আমির আবু বক্কর সিদ্দিক , চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল ও আব্দুল কাদের এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহবায়ক আসলাম হোসেন অর্ক।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এডভোকেট আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় কর্মীসভার উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত চুয়াডাঙ্গার শহীদ প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ'র বাবা আবু সাঈদ মন্ডল। সভাপতির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আমীর রুহুল
আমিন বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা কিভাবে পূরণ করা যায়, সেটা জাতির সামনে কিভাবে পেশ করা যায়, তারই এক মাইলফলক হয়ে থাকবে জেলা জামায়াতের এই সম্মেলন। মানবতার কল্যাণে জামায়াত কাজ করবে এবং করে আসছে।জামায়াতে ইসলামী মানুষের ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা, ভাতের অধিকার, সার্বভৌমত্বের অধিকার ফেরানোর জন্য কাজ করছে।

উল্লেখ্য, বিগত ২০ বছরে চুয়াডাঙ্গাতে এতো বড় কর্মী সম্মেলন হয়নি। জেলা জামায়াতের সকল কর্মপরিষদের সদস্য, জেলার ৫ থানার সাংগঠনিক ৮ জন থানা আমির, স্থানীয় জামায়াত নেতাসহ প্রায় লক্ষাধিক নেতাকর্মী এ কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। 

রাজু

×